ব্যাংক ও বীমা সঞ্চয়ের মধ্যে পার্থক্য

কল্যাণ চক্রবর্তী:

ব্যাংক এবং বীমা দুইটি-ই অর্থলগ্নী প্রতিষ্ঠান কিন্তু এই দুইয়ের মধ্যে সঞ্চয়ের ধরণটি আলাদা। বীমা পেশায় যারা রয়েছেন তাদেরকে একটি কথার বারবার উত্তর দিতে হয় বা সমস্যায় পড়তে হয় যে, বীমা করে লাভ নেই তার চেয়ে ব্যাংকে টাকা রাখলে লাভ আছে। ফলে এ দু’টি সঞ্চয়ের ধরণ সম্পর্কে জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। কেননা মানুষকে বুঝাতে না পারলে কেউ বীমা করে না। একবার যদি বাস্তব উদাহরণসহ বুঝানো যায় তবে আমার বিশ্বাস কেহ ব্যাংক সঞ্চয় ও বীমা সঞ্চয়ের তুলনামূলক প্রশ্ন উত্থাপন করবেন না। ব্যাংক ও বীমা সঞ্চয়ের মধ্যে পার্থক্যগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হইল।

  • বীমাতে একটি নির্দিষ্ট বার্ষিক প্রিমিয়াম দিয়ে পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য জীবনের ঝুঁকি রাখা যায়। কিন্তু ব্যাংক সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে এ রকম কোন সুবিধা নেই।
  • বীমাতে আনুমানিক ৬ হাজার টাকা বার্ষিক প্রিমিয়াম দিয়ে ১ লক্ষ টাকার একটি সম্পদ ক্রয় করা যায়। তবে ব্যাংকে ৬ হাজার টাকা জমা দিয়ে এরকম কোন মূল্যবান অর্থ ক্রয় করা যায় না।
  • মেয়াদের মধ্যে গ্রাহকের মৃত্যু হলে বীমার নমিনিকে ১ লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। কিন্তু ব্যাংকে ৬ হাজার টাকা জমা দিয়ে গ্রাহক মারা গেলে তার পরিবারকে ঐ ছয় হাজার টাকাই ফেরত দেওয়া হয়।
  • বীমাতে, বীমা আইন অনুযায়ী নমিনি নিয়োগ থাকলে কোন জটিলতা ছাড়াই নমিনিকে লাভসহ বীমাকৃত টাকা প্রদান করা হয়।  কিন্তু ব্যাংক সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে গ্রাহক মারা গেলে “উত্তরাধিকার সনদ” Succession Certificate ছাড়া টাকা ফেরত দেওয়া হয় না। এটা অত্যন্ত জটিল পদ্ধতি।
  • বীমার যে কোন দাবী পরিশোধের সময় নিশ্চিত না হয়ে টাকা প্রদান করা হয় না। ফলে গ্রাহকের প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। কিন্তু ব্যাংক সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে গ্রাহকের চেক বই হারিয়ে গেলে বা চুরি করে তার স্বাক্ষর নকল করে যে কেউ টাকা তুলতে পারে। ফলে এ ক্ষেত্রে গ্রাহকের প্রতারিত হওয়ার ভয় থাকে।
  • বীমা বাধ্যতামূলক সঞ্চয়। তাই মেয়াদের মধ্যে টাকা ফেরত দেওয়া হয় না। তবে কিস্তির দাবী ও লোন দেওয়া হয়। আর ব্যাংক সঞ্চয় বাধ্যতামূলক নয়। তাই চাহিবামাত্রই সব টাকা ফেরত দেওয়া যায়।
  • বীমা পারিবারিক নিরাপত্তামূলক সঞ্চয়। আর ব্যাংক সঞ্চয় পারিবারিক নিরাপত্তামূলক সঞ্চয় নয়, তবে লাভের হিসাব করলে বীমার থেকে ব্যাংকে বেশি হয়। যদিও এখানে মানুষের মৃত্যু ঝুঁকি রাখে না।
  • বীমা সঞ্চয়ে আজীবন পেনশন ও ছেলেমেয়ের বিবাহ, লেখাপড়ার বৃত্তি পাওয়ার ব্যবস্থা আছে। কিন্তু ব্যাংক সঞ্চয়ে এরূপ ব্যবস্থা নেই।

তবে বীমা ও ব্যাংক সঞ্চয় অনেকটা ভাত ও কাপড়ের মত। যেমন- শুধু ভাত খেয়ে জীবন ধারণ করা যায় না, কাপড়ও পরা লাগে। আবার শুধু কাপড় পরেও জীবন চলে না, তিন বেলা ভাতও খেতে হয়। সুতরাং যে কোন সঞ্চয় মানুষের প্রয়োজন। তবে যেহেতু মানুষ মরণশীল যে কোন সময় তার মৃত্যু হতে পারে। তাই তার মৃত্যুর ফলে ছেলেমেয়ের জীবন ধারণ ও লেখাপড়া যাতে বন্ধ হয়ে না যায়, তার জন্য বীমা সঞ্চয়ই অধিকতর ফলপ্রসূ। কেননা জীবন বীমা অর্থনৈতিক দুর্দশাগ্রস্ত পরিবারের জন্য একটি আকস্মিক ফলবহনকারী সঞ্চয়।

লেখক: সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সে কোম্পানি লিমিটেড’র এডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর অ্যান্ড সিএফও।