ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: ওবামাকেয়ার খ্যাত মার্কিন স্বাস্থ্যসেবা আইন বাতিলের প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভ। প্রাথমিক বাজেট প্রস্তাব পাস করেছে ডোনাল্ড জে ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান। প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার ডেমোক্রেট দলের কোন প্রচেষ্টা এই বাজেট প্রস্তাব আটকাতে পারেনি।
হ্যাঁ/না ভোটের মাধ্যমে শুক্রবার এই বাজেট প্রস্তাব পাস হয়। ওবামাকেয়ার বাতিলে বাজেট প্রস্তাবের পক্ষে ২২৭টি ভোট পড়ে এবং ১৯৮ ভোট পড়ে এর বিপক্ষে।আর ভোটদানে বিরত ছিলেন ১০ জন। ওবামাকেয়ার বাতিলের খসড়া আইন তৈরি করতে ২৭ জানুয়ারি নাগাদ ৪টি কমিটি গঠনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বাজেট প্রস্তাবে।
ভোট অনুষ্ঠিত হওয়ার পর এক বিবৃতিতে হাউস স্পিকার পল রাইয়ান বলেন, ওবামাকেয়ার বাতিলের প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে আমরা এই আইন থেকে সৃষ্ট সমস্যা থেকে আমেরিকানদের মুক্তি দিতে খুব কাছাকাছি পৌঁছেছি।
এই প্রস্তাব আমাদেরকে সমস্যা থেকে উত্তরণে ধাপে ধাপে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে এবং আমরা আমেরিকানদের স্বাস্থ্যসেবা তাদের নিয়ন্ত্রণে এনে দিতে পারব, বলেন স্পিকার পল রাইয়ান।
প্রাথমিক বাজেট প্রস্তাব পাসের পর মার্কিনিদের স্বাস্থ্যসেবা প্রকল্প ওবামাকেয়ার বাতিল করতে আরো কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হবে। এরমধ্যে দ্বিতীয় ধাপে প্রয়োজন হবে একটা বাতিল বিল, যা হাউস ও সিনেটের মাধ্যমে পাস করতে হবে।
এরপর ওই বিলে প্রেসিডেন্টের স্বাক্ষর প্রয়োজন হবে। তারপর স্বাস্থ্যসেবার জন্য বীমাখাতের উপযুক্ত করে নতুন বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে।যা কার্যকরের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবায় বড় পরিবর্তন আসবে।
নির্বাচনী প্রচারাভিযানের চূড়ান্ত সপ্তাহে ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০১০ সালের স্বাস্থ্যসেবা আইন তথা ওবামাকেয়ার খুব দ্রুত বাতিলের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এজন্য কংগ্রেসের একটি বিশেষ অধিবেশন ডাকার ঘোষণাও দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তিনি বলেছিলেন, আমরা এটা করবো এবং খুব, খুব দ্রুত করবো। এটা একটা বিপত্তি।
তবে নির্বাচনে জেতার পর আগের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে আসার কথা ব্যক্ত করেন ট্রাম্প। ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, ওবামাকেয়ার’র মূলনীতিগুলোকে তিনি খুব পছন্দ করেন। তার এই পরিবর্তনের বড় কারণ রয়েছে বলেও জানান।এখন সেই অবস্থান থেকেও ইউটার্ন নিলেন ট্রাম্প। ওবামাকেয়ার বাতিলে এবার সরাসরি পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে বারাক ওবামা তার নির্বাচনী ইশতেহারে স্বাস্থ্যসেবাকে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে এনে দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। স্বাস্থ্যসেবা নীতি ও পদ্ধতিতে বীমা শিল্পের ব্যবহারের চমক দেখিয়ে আমেরিকানদের মন জয় করেন ওবামা।
এরপর ক্ষমতায় এসে চালু করেন প্যাশেন্ট প্রোটেকশন অ্যান্ড অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট (পিপিএসিএ), বা সংক্ষেপে অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট (এসিএ) । যা পরিচিতি লাভ করে ‘ওবামাকেয়ার’ নামে। স্বাস্থ্যসেবা শিল্প পুনর্গঠন করতে ২০১০ সালের ২৩ মার্চ প্রেসিডেন্ট ওবামার দ্বারা অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট আইনে পরিণত হয়। আর ২০১২ সালের ২৮ জুন সুপ্রীম কোর্ট এটিকে স্বীকৃতি দেয়।
ওবামাকেয়ারের উদ্দেশ্য হলো- সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত স্বাস্থ্যবীমায় আমেরিকানদের আরো প্রবেশাধিকার দেয়া এবং দেশের স্বাস্থ্যসেবার ক্রমবর্ধমান খরচ কমানো। ভোক্তা সুরক্ষা, প্রবিধান, ভর্তুকি, কর, বীমা এক্সচেঞ্জ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য বীমার ক্রয়ক্ষমতা, মান এবং প্রাপ্যতা সম্প্রসারিত করে এই কেয়ার অ্যাক্ট।