ট্রাম্পের হুমকির পরও ৬৪ লাখ মার্কিনি ওবামাকেয়ারে

ইন্টারন্যাশনাল ডেস্ক: ওবামাকেয়ার বাতিল করতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির পরও ৬৪ লাখ মার্কিন নাগরিক এতে নথিভুক্ত হতে স্বাক্ষর করেছেন। গত বছর একই সময়ে এই সংখ্যা ছিল ৬০ লাখ। সে হিসাবে এবার ৪ লাখ মানুষ বেশি ওবামাকেয়ারে নথিভুক্ত হয়েছে। আগামী ২০১৭ সালের জন্য ওবামাকেয়ারে নথিভুক্ত করার প্রাথমিক সময়সীমা ছিল ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে চূড়ান্ত সময়সীমা তথা আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এই সংখ্যা ১ কোটি ৩৮ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করছে প্রশাসন।

এবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাজ্যগুলোর মধ্যে পেনসিলভানিয়া, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, উত্তর ক্যারোলিনা এবং জর্জিয়ায় সর্বোচ্চ সংখ্যক নাগরিককে এই সেবায় অন্তর্ভূক্তির তালিকা করেছে কর্তৃপক্ষ। ওবামাকেয়ার বাতিলে রিপাবলিকান দলের হুমকির পরও জনগণ বীমা কভারেজ পাওয়ার জন্য এতে নথিভুক্ত হতে আগ্রহী- এই বিষয়টি প্রমাণ করতে সম্প্রতি ওবামা প্রশাসন এই তথ্য প্রকাশ করেছে।

স্বাস্থ্য ও মানবসেবা (এইচএইচএস) সচিব সিলভিয়া বুরওয়েল সাংবাদিকদের বলেন, নথিভুক্তির এই সংখ্যা থেকে দেখা যায়, ওবামাকেয়ারের বাজার সম্পর্কে 'ডুমস ডে' বা শেষদিন বলে যে ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছে তা সফল হয়নি। অর্থাৎ এখনো এর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। প্রিমিয়াম বৃদ্ধির দৃষ্টি আকর্ষণ এবং বাতিলের হুমকি সত্ত্বেও জনগণ এখনো এতে নথিভুক্ত হতে আগ্রহী বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

সিলভিয়া আরো বলেন, কার্যক্রমের শেষ পর্যন্ত ১৩.৮ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৩৮ লাখ নাগরিক নথিভুক্তির ভবিষ্যৎবাণী সফলের চেষ্টা করছে তার বিভাগ। ওবামাকেয়ারের কভারেজের ওপর নির্ভরশীল জনগণের স্বার্থে আইনটি বাতিল না করতে রিপাবলিকান দলের প্রতি আহবান জানিয়েছেন সিলভিয়া। এখন পর্যন্ত ৩০ হাজারের বেশি গ্রাহক ওবামাকেয়ার’র কলসেন্টারে ফোন করে বাতিলের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

২০১৭ সালের জন্য ওবামাকেয়ারে নথিভুক্ত হতে স্বাক্ষরিত ৬৪ লাখ গ্রাহকের মধ্যে ৪৩ লাখ ১০ হাজার বিগত বছরেও এই সেবা গ্রহণ করেছেন এবং প্রথমবারের মতো নথিভুক্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৫০ হাজার। তবে এই নতুন গ্রাহকের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় কম। আগের বছর প্রাথমিক সময়সীমার মধ্যে নতুন গ্রাহকের এই সংখ্যা ছিল ২৪ লাখ।

চলতি বছর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযানে ওবামাকেয়ার বাতিলের অঙ্গীকার করেছিলেন ডোনাল্ড জে ট্রাম্প। তবে নির্বাচনে জেতার পর আগের অবস্থান থেকে কিছুটা সরে আসার কথা জানিয়েছেন তিনি। ৪৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প জানান, ওবামাকেয়ার’র মূলনীতিগুলোকে তিনি খুব পছন্দ করেন। তার এই পরিবর্তনের বড় কারণ রয়েছে বলেও জানান।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে বারাক ওবামা তার নির্বাচনী ইশতেহারে স্বাস্থ্যসেবাকে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে এনে দেয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। স্বাস্থ্যসেবা নীতি ও পদ্ধতিতে বীমা শিল্পের ব্যবহারের চমক দেখিয়ে আমেরিকানদের মন জয় করেন ওবামা। ক্ষমতায় এসে চালু করেন প্যাশেন্ট প্রোটেকশন অ্যান্ড অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট (পিপিএসিএ), বা সংক্ষেপে অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট (এসিএ) । যা পরিচিতি লাভ করে ‘ওবামাকেয়ার’ নামে।

স্বাস্থ্যসেবা শিল্প পুনর্গঠন করতে ২০১০ সালের ২৩ মার্চ প্রেসিডেন্ট ওবামার দ্বারা অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট আইনে পরিণত হয়। আর ২০১২ সালের ২৮ জুন সুপ্রীম কোর্ট এটিকে স্বীকৃতি দেয়। ওবামাকেয়ারের উদ্দেশ্য হলো- সাশ্রয়ী মূল্যে মানসম্মত স্বাস্থ্যবীমায় আমেরিকানদের আরো প্রবেশাধিকার দেয়া এবং দেশের স্বাস্থ্যসেবার ক্রমবর্ধমান খরচ কমানো। ভোক্তা সুরক্ষা, প্রবিধান, ভর্তুকি, কর, বীমা এক্সচেঞ্জ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে সরকারি ও বেসরকারি স্বাস্থ্য বীমার ক্রয়ক্ষমতা, মান এবং প্রাপ্যতা সম্প্রসারিত করে এই কেয়ার অ্যাক্ট।