নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসরকারি বীমা কোম্পানি ফারইষ্ট ইসলামী লাইফে বীমা করলেই গ্রাহকরা পাচ্ছেন দামি গিফট। এসব গিফটের মধ্যে রয়েছে এলইডি টিভি, প্রেসার কুকার, ডিনার সেট, মোবাইল ফোন। তবে গ্রাকহদের এ ধরণের গিফট দিয়ে বীমা পলিসি করানো কতটা আইন সঙ্গত তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বীমা সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ১ লাখ টাকার একটি মেয়াদি বীমার করলে গ্রাহককে মোবাইল ফোন, ৩ লাখ টাকার একটি মেয়াদি বীমা করলে প্রেসার কুকার, ১০ লাখ টাকার বীমা করলে ৪৮ সেটের ডিনার সেট, ২০ লাখ টাকার বীমায় ২৪ ইঞ্চি এলইডি টিভি উপহার হিসেবে পাচ্ছেন গ্রাহকরা।
বীমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বীমা আইনে প্রলুব্ধ করে পলিসি করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করতে কোম্পানির কর্মকর্তার এ ধরণের উপহার দিচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা দরকার। অন্যদিকে এজেন্টদের কমিশন থেকে গ্রাহককে উপহার দেয়ার উপরেও বীমা আইনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কমিশন থেকে রেয়াত দেয়া বা নেয়া দুটোই শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
তাদের মতে, বর্তমান বীমা বাজার এমনিতেই বিশৃংখল অবস্থায় রয়েছে। ফারইষ্টের মতো একটি কোম্পানির মাঠ কর্মীদের এ ধরনের কর্মকাণ্ড বাজার নতুন ধারার নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। যা গোটা বীমা খাতকে আরো বিশৃঙ্খল করে তুলতে পারে। তাই নিয়ন্ত্রক সংস্থার উচিত খুব দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া।
বীমা আইন ২০১০ এর ১৩৩ ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যক্তি বিভ্রান্তিকর মিথ্যা বা প্রতারণামূলক বলিয়া জানেন, এইরূপ বিবরণী, আশ্বস পূর্বাভাস দ্বারা বা প্রতারণামূলক বলিয়া জানেন, বা প্রতারণামূলক পূর্বাভাস দ্বারা কোনো ব্যক্তিকে কোনো বীমাকারির সহিত বীমা চুক্তি সম্পাদনের প্রস্তাবে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করিলে তিনি অপরাধে অভিযুক্ত হইবেন এবং অভিযোগ প্রমাণিত হইলে অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা অনধিক ৩ (তিন বৎসরের কারাদণ্ড বা উভয় দন্ডে দণ্ডিত হইবেন’
অন্যদিকে বীমা আইন ২০১০ এর ৬০ (১) উপধারার বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশে জীবন বীমা অথবা সম্পত্তি সংক্রান্ত কোনো প্রকারের ঝুঁকির ব্যাপারে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কোনো ব্যক্তিকে কোন বীমা গ্রহণ, নবায়ন অথবা অব্যহত রাখিবার জন্য উৎসাহিত করিতে কমিশন অথবা তাহার অংশ বিশেষের অথবা পলিসিতে প্রদর্শিত প্রিমিয়ামের কোনো রেয়াত প্রদান করিবেন না বা প্রদানের প্রস্তাব করিবে না অথবা গ্রাহক বা যে ব্যক্তি পলিসি গ্রহণ, নবায়ন বা সচল রাখিবেন তিনি বীমাকারি কর্তৃক প্রকাশিত নির্দেশিকা কিংবা তালিকা অনুসারে স্বীকৃত রেয়াত ভিন্ন অন্য কোনো রেয়াত গ্রহণ করিতে পারিবে না।
উপধারা ২ এ বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি এ ধারার লঙ্ঘন করিলে তাহাকে বিধি দ্বারা নির্ধারিত পরিমাণ জরিমানা করা যাইবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১ লাখ টাকার ১০ বছর মেয়াদি একটি বীমা করলে প্রিমিয়াম আসে ১০ হাজার টাকা। সেখানে গ্রাহক পাচ্ছেন ১ থেকে ২ হাজার টাকার মোবাইল ফোন। ৩ লাখ টাকার একটি পলিসিতে প্রিমিয়ামের পরিমাণ ৩২ হাজার ৪শ’ টাকা। গ্রাহক পেয়েছেন প্রায় ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা মূল্যের প্রেসার কুকার। ১০ লাখ টাকার একটি ১০ বছর মেয়াদি একটি পলিসিতে গ্রাহকে দেয়া হয়েছে ৪৮ পিসের একটি ডিনার সেট। যার আনুমানিক মুল্য ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। ২০ লাখ টাকার একটি পলিসিতে গ্রাহককে দেয়ার হয়েছে ২৪ ইঞ্চির একটি এলইডি টিভি। যার আনুমানিক মূল্য ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা।
জানা গেছে, গ্রাহকেদর মোটা অংকের এসব উপহার দেয়া হচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলকার ব্রাঞ্চ ইনচার্জ বা উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের হাত দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে। এ বিষয়ে ফারইষ্ট ইসলামী লাইফের জয়েন্ট ভাইস প্রেডিডেন্ট ডা. সাধন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পুরস্কারগুলো আমি দেইনি, তবে আমার হাত দিয়ে পুরস্কার তুলে দেয়া হয়েছে। এসব পুরস্কারের খরচ মাঠ কর্মীরাই দিয়ে থাকে। এর সঙ্গে প্রধান কার্যালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বীমা আইনে এ বিষয়ে কি বলা আছে তা আমি জানি না। যদি নিষেধাজ্ঞা থাকে তাহলে তা আমি মাঠ কর্মীদের জানিয়ে দিব। আর আপনাদের মাধ্যমে সারা দেশের মাঠ কর্মীরাই তা জানবে।
গ্রাহকদের পুরস্কার দেয়া বিষয়ে ফারইষ্ট ইসলামী লাইফের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্লাহ বলেন, গ্রাহকদের পুরস্কার দেয়ার বিষয়টি একটা কার্টেসি, একটা সৌজন্যতা। আমার অফিসে একজন গ্রাহক আসলে তাকে একটি মগ বা ব্যাগ উপহার হিসেবে দিতেই পারি এতে দোষের কিছু নেই। বীমা এজেন্টরা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কাউকে পলিসি করালে গিফট দিয়ে থাকে। এর বাইরে কিছু নয়।
মোবাইল হ্যান্ডসেট বা এলইডি টিভির মতো উপহার দেয়ার কোনো সুযোগ আছে কী না জানতে চাইলে তিনি বলে এরকম কোনো বিষয় হয়েছে কি না তা আমাকে তদন্ত করে দেখতে হবে। অপর এক প্রশ্নে আইনগত বৈধতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ক্ষেপে যান, তিনি বলেন, এদেশে সাংবাদিকতায় পেশাদারিত্ব তৈরি হয়নি। সাংবাদিকরা আমি বললেও লিখবে না বললেও লিখবে। এসব ছাড়েন এ সেক্টরের জন্য ভালো কিছু করেন।
উল্লেখ্য ২০১৫ সালে ২৫৬ কোটি ২০ লাখ টাকা নতুন প্রিমিয়াম সংগ্রহ করে প্রিমিয়াম আয়ের দিক থেকে শীর্ষ অবস্থানে ছিল ফারইস্ট ইসলামী লাইফ।