অবলিখনের মৌলিক ধারণা

সৈয়দ আব্দুল্লাহ জাবির:

সহজ কথায় অবলিখন হচ্ছে ঝুঁকি নির্বাচন (Selection of Risk) । ঝুঁকি বলতে এমন কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা বা ঘটার সম্ভাবনা বুঝায় যা ঘটলে সম্পদ বা জীবন বা উভয়ের ক্ষতি সাধন হতে পারে। জীবন বীমার ঝুঁকি বলতে মৃত্যু বা দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাকে বুঝায়। বিশদভাবে বলা যায়, অবলিখন হচ্ছে জীবন বীমা শিল্পের একটি বিশেষ টেকনিক্যাল প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে জীবন বীমা প্রস্তাবকের সম্ভাব্য অতিরিক্ত মৃত্যু ঝুঁকি ও স্বাভাবিক মৃত্যুর হার বিবেচনা করে প্রস্তাবকের প্রস্তাবিত ঝুঁকি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা বা কোন শর্ত সাপেক্ষে গ্রহণযোগ্য হবে তা বিবেচনা করা। সর্বোপরি প্রস্তাবিত ব্যক্তির জীবন বীমা ঝুঁকি প্রতিষ্ঠানের পক্ষে প্রয়োজনীয় প্রিমিয়াম নির্ধারণ সাপেক্ষে গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনা করাই অবলিখন।

অবলিখনের মূলনীতি:

বীমাবৃত জীবনের ভবিষ্যত মৃত্যু ঝুঁকির দায় পরিশোধের জন্য বীমাবৃতের নিকট থেকে প্রয়োজনীয় প্রিমিয়াম গ্রহণের মাধ্যমে লাইফ ইনসিওরেন্স ফান্ড যথার্থভাবে সৃষ্টিই অবলিখনের মূলনীতি।

অবলিখনের উদ্দেশ্য: 

অবলিখনের দুইটি উদ্দেশ্য রয়েছে- ক) প্রতিষ্ঠানের নিকট প্রস্তাবপত্রের গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনা করা ও প্রস্তাবকের জন্য তা যুক্তিযুক্ত হবে কিনা বিবেচনা করা। খ) প্রতিষ্ঠানের জন্য ফলপ্রসু ও লাভজনক হবে কিনা বিবেচনা করা।

অবলিখক (Underwriter):

অবলিখক হচ্ছেন জীবন বীমা প্রতিষ্ঠানের সেই কর্মকর্তা যিনি প্রস্তাবিত জীবনের ঝুঁকি গ্রহণযোগ্য কিনা আর গ্রহণযোগ্য হলে কি কি শর্ত সাপেক্ষে তা গ্রহণযোগ্য হবে তা নির্ধারণ করে থাকেন।

অবলিখন কার্য পদ্ধতি:

ক) অবলিখন সংক্রান্ত সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি ও নথি সংরক্ষণ করা।

খ) প্রস্তাবপত্র ও অন্যান্য ফরম ডিজাইন ও মুদ্রন করা।

গ) অবলিখন সংক্রান্ত নিয়মনীতি প্রচলন, সংশোধন ও প্রয়োগ।

ঘ) দাখিলকৃত প্রস্তাবপত্র প্রক্রিয়াকরণ, পরীক্ষাকরণ, গ্রহণযোগ্যতার জন্য নীতি র্নির্ধারণ।

ঙ) কোম্পানির সার্ভিসিং, হিসাব, দাবী, কম্পিউটার, রি-ইনন্সিওরেন্স, উন্নয়ন প্রশাসন ও এজেন্স বিভাগের সাথে সুষ্ঠু যোগাযোগ ও সমন্বয়ের মাধ্যমে অবলিখন সংশ্লিষ্ট কার্যাদি সম্পন্ন করা।

অবলিখকের দায়িত্বসমূহ:

ক) অবলিখকের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিষ্ঠানকে অতিরিক্ত মৃত্যুদাবী পরিশোধের হাত থেকে রক্ষা করা।

খ) জীবন বীমার টেকনিক্যাল, আইনগত ও মেডিকেল বিষয়ে জ্ঞান রাখা।

গ) একজন অবলিখককে অবলিখন সংক্রান্ত বিষয়ে অগ্রগতি ও মৃত্যুহার পরিবর্তন সংক্রান্ত বিষয়ে অবগত থাকা।

ঘ) জীবন বীমার প্রিমিয়াম হিসাব সংক্রান্ত সার্বিক জ্ঞান রাখা।

ঙ) উন্নয়ন কর্মকর্তাদের সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা ও প্রয়োজনে তাদের সহযোগীতা নেয়া।

অবলিখন সিদ্ধান্ত সমূহ:

১। সাধারণ হারে বিশেষ শর্ত ব্যতিত প্রস্তাব গ্রহণ।

২। বিশেষ শর্তে প্রস্তাব গ্রহণ।

৩। প্রস্তাব স্থগিত (Postpone) করা।

৪। প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করা।

৫। প্রস্তাবপত্রের অনুকূলে অতিরিক্ত চাহিদাদি নিরুপন করা।

অবলিখন জীবন বীমা কোম্পানির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সুষ্ঠুভাবে অবলিখন সংক্রান্ত কার্যাদি সম্পাদন না হলে কোম্পানি বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। যেমন- অতিরিক্ত মৃত্যুদাবী হলে কোম্পানির লাইফ ফান্ড যথাযথ বৃদ্ধি ব্যাহত হতে পারে। ফলে বীমা কোম্পানি আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে পারে। এছাড়া সুষ্ঠুভাবে অবলিখন সংক্রান্ত চাহিদা সম্পাদিত না হলে কোম্পানির নতুন ব্যবসাও বিঘ্নিত হতে পারে। এছাড়া ত্রুটিপূর্ণ অবলিখনের ফলে পরবর্তীতে পলিসি সার্ভিস প্রদানের ক্ষেত্রে ও  এমনকি মৃত্যুদাবী পরিশোধের ক্ষেত্রেও জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে।

একজন অবলিখক অবলিখন সিদ্ধান্ত প্রদানের পাশাপাশি প্রথম প্রিমিয়ামের পাকা রসিদ (First Premium Receipt) ইস্যু করে আর্থিক ঝুঁকি গ্রহণ করে থাকে। তাই অবলিখককে অবলিখন নীতিমালা বিষয়ক সম্যক জ্ঞান রাখার পাশাপাশি এফপিআর ইস্যুর পূর্বে নিশ্চিত হতে হবে যে প্রস্তাবক কর্তৃক জমাকৃত প্রিমিয়ামের টাকা যথাযথভাবে ইস্যুকৃত পিআর এর মাধ্যমে কোম্পানির হিসাবে জমা করা হয়েছে।

লেখক: ইভিপি (অবলিখন ও রি-ইনসিওরেন্স), প্রাইম ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড।