নিজস্ব প্রতিবেদক: অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে সমাজ পরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বীমা পেশাজীবীরা। মাঠ পর্যায়ে কর্মরত বীমা কর্মীদের আয় বাড়লে শুধু বীমা কর্মীই লাভবান হয় না, এতে সমাজের অন্যরাও আর্থিকভাবে উপকৃত হয়। একটি বীমা পলিসি সমাজে একজন ব্যক্তির ভবিষ্যত আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। তাই বীমা কর্মীদের আয়ের অংশিদার সে শুধু একা নয়। এর অংশিদার গোটা সমাজ। একজন বীমা কর্মীর আয় বাড়লে গ্রাহকের পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
আজ শনিবার ফারইষ্ট ইসলামী লাইফের পল্টনের নিজস্ব ভবনে অনুষ্ঠিত মরনোত্তর বীমা দাবির চেক হস্তান্তর ও বীমা উন্নয়ন সভায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির উর্ধ্বতন কর্মকর্তার এসব কথা বলেন।অনুষ্ঠানে সভাপত্তি করেন ঢাকা নর্থ সার্ভিস সেন্টারের জেএসভিপি অ্যান্ড ইনচার্জ আলহাজ মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল। সভায় ৩ জন বীমা গ্রাহকের নমিনিকে দাবি বাবদ ২৩ কোটি ৭১ লাখ ৮১৭ টাকার তিনটি চেক হস্তান্তর করা হয়।
বক্তারা আরো বলেন, প্রত্যেক ব্যক্তিই আর্থিক ঝুঁকির মধ্যে থাকে। সে বিশ্বের যত ক্ষমতাধর বা ধনী ব্যক্তি হোক অথবা নিম্ন আয়ের কেউ। আগামীকাল কি হবে তা কেউ জানে না। কিন্তু ব্যক্তির কোনো ক্ষতির কারণে তার গোটা পরিবারই ক্ষতির মধ্যে পড়ে। আর এই ক্ষতিতে ওই পরিবারের সদস্যদের পাশে আর্থিক সহায়তা নিয়ে দাঁড়াতে পারে বীমা কোম্পানির একজন মাঠ কর্মী।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্যাহ বলেন, বীমা কর্মীরা হচ্ছেন সমাজ পরিবর্তনের অগ্রণী দল। একজন ব্যক্তি আর্থিকভাবে সচ্ছলতা লাভ করার অর্থ হলো সমাজের একজনের দারিদ্রতা দূর হওয়া। এভাবেই একটি দেশ এগিয়ে যায়। সবাই সহযোগিতা করতে না পারলে সরকারের একার পক্ষে সমাজ বদলানো সম্ভব নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
হেমায়েত উল্যাহ বলেন, সবাই যার যার অবস্থান থেকে অসহায়। অসহায় বলেই বিল গেটস থেকে শুরু করে প্রত্যেক ব্যক্তি তার অফিস বা ব্যবসা খোঁজে। কারণ, এগুলো বন্ধ হলে সে সুবিধা পাবে না। অর্থাৎ সে অসহায় হয়ে পড়বে। এই আর্থিক অনিশ্চয়তার কিছুটা হলেও নিশ্চয়তা দিতে পারে একটা বীমা পলিসি। মানুষের দুর্দিনে তাদের সহযোগিতায় এগিয়ে আসে বীমা কোম্পানি।
তিনি আরো বলেন, যে সমাজ আপনাকে বড় করেছে সেই সমাজের ঋণ আপনাকে শোধ করতে হবে। এ জন্য অর্থ-সম্পদ প্রয়োজন আছে। নিজের অর্থ না থাকলে অন্যদের সহযোগিতা করা যায় না। সমাজের জন্য কাজ করা বীমা কর্মীদের জন্য সহজ। তবে এ জন্য কর্মীদেরকে আরো দক্ষ হতে হবে। সবাইকে আরো বেশি পরিশ্রমি করতে হবে।
বক্তব্যে ডিএমডি অ্যান্ড কোম্পানি সেক্রেটারি সৈয়দ আবদুল আজিজ বলেন, অভিযোগ আসে, বীমা কোম্পানি টাকা দেয় না বা বীমা কোম্পানিতে টাকা রাখলে পাওয়া যায় না। কিন্তু ফারইষ্ট দেখিয়ে দিচ্ছে তারা দাবি পরিশোধে কোন দেরি করে না। আজকের এই অনুষ্ঠানই তার প্রমাণ।
বীমা কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ফারইষ্টকে এগিয়ে নিতে হলে আমাদের আরো বেশি কাজ করতে হবে। এতো দিন কোম্পানির শুধু আয়ই হয়েছে, ব্যয় হয়নি। তবে এখন অনেক পলিসির মেয়াদ পূর্ণ হচ্ছে, দাবি পরিশোধে অনেক অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। তাই কোম্পানির অর্থে টান পড়ছে। অফিসের অবস্থান শক্তিশালী রাখতে তিনি সবাইকে আরো সক্রিয়ভাবে কাজ করার আহবান জানান।
কোম্পানির সিদ্ধান্ত দাতাদের উদ্দেশ্যে আবদুল আজিজ আরো বলেন, ইসলামী বীমা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ফারইষ্টে অন্যান্য ধর্মের গ্রাহক সংখ্যা তুলনামূলক কম। কোম্পানির ব্যবসা বাড়াতে তিনি নিয়ম-নীতির মধ্যে অবস্থান করেই অন্যান্য ধর্মের ব্যক্তিদের আরো বেশি যুক্ত করার পরামর্শ দেন। পাশাপাশি তিনি খরচ কমিয়ে ব্যবসা বাড়ানোর আহবান জানান।
ঢাকা ডিভিশনের এসইভিপি অ্যান্ড ইনচার্জ আলহাজ অধ্যাপক সৈয়দ আব্দুল মতিন বলেন, যখন একজন ব্যক্তি মারা যান তখন শুধুমাত্র বাবা অথবা স্বামী হিসেবে তার মৃত্যু হয় না। পাশাপাশি তার আয় বন্ধ হয়ে যায়। প্রথম দু’টো শূন্যতা পূর্ণ না করা গেলেও অন্তত আর্থিকভাবে ক্ষতিপূরণ করা যায়। একটা জীবন বীমা কোম্পানি এ কাজটিই করে থাকে।
বীমা গ্রাহক জীবিত অবস্থায় আর্থিকভাবে লাভবান হন। মারা গেলেও তার পরিবার আর্থিকভাবে লাভবান হয়। পাশাপাশি ইসলামী বীমার একজন গ্রাহক প্রতিষ্ঠানের সবার পক্ষ থেকে দোয়াও পায়। তিনি বলেন, শিশু বীমা সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হলে সমাজ থেকে বখাটের সংখ্যা কমতে পারে। পাশাপাশি পেনশন বীমা চালু করলে বৃদ্ধ বয়সে বাবা-মাকে অবহেলার শিকার হতে হবে না। তাদের বৃদ্ধিশ্রমেও যেতে হবে না।
অনুষ্ঠান শেষে তিনটি মরনোত্তর বীমা দাবির চেক হস্তান্তর করা হয়। মাশুক-উল-আবেদীন নামে একজন গ্রাহকের পরিবারকে ২০ লাখ ৪৮ হাজার টাকা, আমির হোসেন খান’র পরিবারকে ২ লাখ ৭৫ হাজার ৮১৭ টাকা এবং মো. মহসিন মোল্লার পরিবারকে ৪৮ হাজার টাকার মরনোত্তর বীমা দাবির চেক হস্তান্তর করা হয়।
শিশু বীমার বার্ষিক বৃত্তি হিসেবে ৪৮ হাজার টাকার চেক প্রদান ছাড়াও মাসিক ২ হাজার টাকা হিসেবে আগামী ১১ বছর ওই শিশুকে বৃত্তি প্রদান করা হবে। এছাড়া পলিসির মেয়াদ পূর্ণ হলে ওই শিশুকে এককালীন ২ লাখ টাকা প্রদান করবে ফারইষ্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স।