শক্তিশালী এজেন্সি গঠনে পরিকল্পনা, নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, পরিদর্শন ও নেতৃত্বের ভূমিকা

কল্যাণ চক্রবর্তী:

জীবন বীমা ব্যবসা পরিচালনার জন্য শক্তিশালী সংগঠনের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। আর একটি এজন্সিকে শক্তিশালী করণে যে সকল বিষয় প্রয়োজন তার মধ্যে পর্যায়ক্রমে পরিকল্পনা, নিয়োগ, প্রশিক্ষণ পরিদর্শন ও নেতৃত্ব অন্যতম। নিম্নে এগুলি সম্পর্কে আলোকপাত করা হলো:

পরিকল্পনা (Planning): পরিকল্পনা হলো যে কোন উন্নয়নের পূর্বশর্ত। তাই একটি শক্তিশালী এজন্সি গঠনে পরিকল্পনার গুরুত্ব অত্যাধিক। একজন বীমা সংগঠককে একটি সুনিশ্চিত পরিকল্পনা তৈরী করে সেই মোতাবেক অগ্রসর হতে হবে। এখন প্রশ্ন হলো পরিকল্পনা কী? সাধারণ ও সহজ অর্থে পরিকল্পনা বলতে কোন একটি সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য যে চিন্তা-চেতনা বা কায়িক বিষয়গুলো পূর্ব থেকে ঠিক করে নিতে হয় তাকে বুঝায়। জীবন বীমা ব্যবসার ক্ষেত্রে এ বিষয়টি খুবই দরকারী । এক্ষেত্রে যে সকল বিষয়ে পরিকল্পনার প্রয়োজন তাহা হলো নিম্নরুপ।

যথা- ক) পরিসংখ্যানগত, খ) নতুন ব্যবসার লক্ষ্যমাত্রা, গ) সময় নির্ধারণ, ঘ) খরচের লক্ষ্যমাত্রা

ক) পরিসংখ্যানগত তথ্য (Statistical information): একটি পরিসংখ্যানগত তথ্য বীমা ব্যবসায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমে বীমা ব্যবসার এলাকা নির্ধারণ করতে হবে। এলাকা নির্ধারণের পর ঐ এলাকা সর্ম্পকে বিস্তারিত তথ্য অবগত হতে হবে। যেমন ১) নির্বাচিত এলাকার লোকসংখ্যা কত, পুরুষ ও মহিলা সংখ্যা কত, এর মধ্যে বীমাযোগ্য কত জন। ২) এলাকাটি যদি জেলা হয় তবে সে জেলায় থানার সংখ্যা কত, ইউনিয়নের সংখ্যা কত ৩) প্রত্যেকটি থানা এবং ইউনিয়নের সাথে জেলা শহরে যোগাযোগের মাধ্যম কি। ৪) ঐ এলাকার আয়ের উৎস কি এবং তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা কেমন। এই সমস্ত তথ্য থানা পরিষদের অথবা জেলা পরিষদের পরিসংখ্যান বোর্ড থেকে সংগ্রহ করা যায়।

খ) নতুন ব্যবসার লক্ষ্যমাত্রা(New Business Target): যখন এলাকা নির্ধারণ চূড়ান্ত হবে তখন উক্ত এলাকার পরিসংখ্যানগত তথ্যের উপর ভিত্তি করে প্রয়োজনীয় সংখ্যাক কর্মীর মাধ্যমে একটি নতুন ব্যবসার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে নিতে হবে। আর এই  লক্ষ্যমাত্রার উপর ভিত্তি করে ব্যবসা সংগ্রহে এগুতে হবে। যে কোন বিজয়ের উল্লেখযোগ্য মাধ্যম হচ্ছে একটি লক্ষ্যমাত্রা। যেমন ছাত্র জীবনের লক্ষ্য থাকে পরীক্ষায় ভাল ফল করা, সৈনিক জীবনের লক্ষ্য থাকে যুদ্ধে নিজ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা, খেলোয়ারদের লক্ষ্য থাকে টিমকে জয়যুক্ত করা। এই জন্য পূর্ব থেকে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কাজ করতে হবে।

গ) সময় নির্ধারণ (Time Planning): নতুন ব্যবসা নির্ধারণের পর সংগঠকদের সময় নির্ধারণ করতে হবে। কেননা এর সাথে ব্যবসা বৃদ্ধির একটি নিবিড় সর্ম্পক রয়েছে। কাজ কেহ করতে চায় না, সংগঠকদের কাজ করাতে হয়। একজন সংগঠকের পূর্ব থেকে সময় নির্ধারণ করতে হয়, কত সময় নতুন এজেন্টদের পিছনে ব্যয় করবেন, কত সময় পুরাতনদের, কত সময় বিভিন্ন এজেন্সি সভা করবেন এবং কত সময় কোম্পানীর লোকাল অফিসে অফিসিয়াল কাজে সময় দিবেন। এজন্য তাকে একটি টাইম সিডিউল করে কাজ করতে হবে।

ঘ) খরচের লক্ষ্যমাত্রা (Cost Analysis): ব্যবসার লক্ষ্যমাত্রার সহিত সংগঠকের আয়ের ও ব্যয়ের সম্পর্ক থাকে। ফলে খরচের হিসাবও সেই অনুপাতে স্থির করতে হবে। অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়লে যে কোন পরিকল্পনা ভেস্তে যাবে। পরিকল্পনা মাফিক খরচ করতে হবে। কোন ক্রমেই অমিতব্যয়ী হওয়া যাবে না। মিত্যব্যয়িতা হলো উন্নতির শ্রেষ্ঠ সোপান। যেখানে যত খরচ করার দরকার সেখানে ঠিক ততটা করতে হবে।

নিয়োগ (Recruitment): পরিকল্পনা শেষ হলে যে বিষয়টি আসে তা হলো এজেন্ট নিয়োগ। নিয়োগ হচ্ছে একটি এজেন্সী শক্তিশালী করার Continuous Process। নিয়মিতভাবে নতুন এজেন্ট নিয়োগ না করলে কোন রকম একটি এজেন্সিকে শক্তিশালী করা যাবে না। এখন প্রশ্ন হলো কাদেরকে এজেন্ট নিয়োগ করতে হবে এবং কোন কোন উৎস থেকে এজেন্ট পাওয়া যাবে।

কাদেরকে এজেন্ট হিসাবে নিয়োগ করা যাবে: নির্বাচনে ভুল করলে একটি এজেন্সি শক্তিশালী  হওয়ার পরিবর্তে হঠকারিতা ও দুর্বলতায় প্রতিপন্ন হবে। এজন্য একটি এজেন্ট নিয়োগ করতে হলে নিম্নলিখিত বিষয়গুলির প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে:

১) এজেন্টের বষস ২২ বৎসরের নিচে হবে না।

২) শারীরিকভাবে যোগ্য, ভাল চেহারা এবং সুন্দর Voice ও উপস্থাপনা কৌশল ভাল হবে।

৩) এজেন্টের সামাজিক অবস্থা (Social background) দেখতে হবে। সামাজিক প্রতিপত্তিশালী পরিবারের একটি ছেলে বীমা পেশার জন্য খুবই দরকার। কেননা এখানে জনগণের টাকা পয়সার লেনদেন থাকে। আর বীমা কোম্পানীকে অহরহ এই টাকা পয়সা নিয়ে ঝামেলায় পড়তে হয়। এজন্য এজেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি গুরুত্বের সহিত বিবেচনা করতে হবে।

৪) শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখতে হবে। বীমা পেশায় ভাল ছেলে আসলেও টিকে না। তাই এমন ছেলেদের বীমা পেশায় আনতে হবে যারা এই পেশাটি যুগোপযোগী করে তোলার জন্য কাজ করে যেতে পারে।

৫) যাদের এই বীমা পেশার প্রতি বিশ্বাস আছে তাদের আনা উচিত। আমাদের সমাজে বীমা পেশায় যারা আছেন তারা সমাজের কাছে অবজ্ঞার পাত্র। এর জন্য অবশ্য সমাজ দায়ী নয়, দায়ী আমরা যারা পেশায় আছি। কেননা আমাদের নৈতিকতা দিয়ে আমরা বীমা পেশাকে সঠিকভাবে জনগণের কাছে এখনো উপস্থিত করতে পারিনি। তাই সর্বদা এই নিন্দার কাঁটাসহ্য করে যারা জীবনে বীমা পেশাকে বিশ্বাসের সহিত গ্রহণ করতে চাইবে তাদেরকে এজেন্ট হিসাবে নিয়োগ দিতে হবে।

৬) যার টাকার প্রয়োজন আছে এবং সে অর্থ বীমা পেশাতে অত্মনিয়োগ করে আয় করতে চায়। অনেক সময় সময় কাটানোর জন্য এবং কিছু টাকা আয় করার জন্য এখানে আসে এদেরকে চিহ্নিত করে নিয়োগ দেওয়া উচিত নয়।

৭) যে সমস্থ ব্যক্তির আচরণ ভাল, কোন খারাপ সঙ্গ নেই, নম্র স্বভাবের এবং তার সংগঠকের নির্দেশ মেনে চলতে চাইবে, এক কথায় যারা আনুগত্যশীল তাদেরকে নিয়োগ দিতে হবে।

৮) যাদের পারিবারিক অবস্থান ভাল যাদের সমাজে উচ্চ শ্রেণীর সহিত বা সমাজের সর্বত্র গ্রহণযোগ্যতা আছে এবং যাদের আত্মীয়স্বজন ভাল তাদেরকে নিয়োগ দিতে হবে।

যে সমস্ত উৎস থেকে এজেন্ট পাওয়া যাবে:

১) যে সমস্ত ব্যক্তি পেশাগত ক্ষেত্রে সমস্যাগ্রস্থ অর্থাৎ যাদের মাসে ১০,০০০/- টাকা পারিবারিক খরচের প্রয়োজন অথচ বেতন পান ৬,০০০/- টাকা, যে সমস্থ ব্যক্তি চাকরি করবেন না, ছেড়ে দিবেন এবং ছেড়ে দিয়ে কি করবেন, এই সমস্ত চিন্তাভাবনা যারা করেন তাদের জীবন বীমায় এজেন্ট নিয়োগ দিয়ে কাজ করাতে পারলে এরা সব থেকে ভালভাবে কাজ করবেন এবং সারা জীবন বীমাকে পেশা হিসাবে গ্রহণ করে নিবেন।

২) স্কুল শিক্ষক ও সাংবাদিকগণ সমাজে যথেষ্ট সম্মানীয় এবং এরা সাদাভাবে জীবনযাপন করেন। এরা সবার কাছে বিশ্বস্থ হতে পারে। এদেরকে যদি জীবন বীমা পেশায় নিয়োগ করা যায় তবে বেশ ভাল করবে।

৩) যে সমস্ত ব্যক্তি ব্যবসায় লোকসান দিয়ে পুজি হারিয়ে সর্বশান্ত হয়েছেন, এরা পরিবারের ভরণপোষণের জন্য হতাশায় থাকেন। এই সমস্থ ব্যক্তিকে যদি উদ্বুদ্ধ করে জীবন বীমা পেশাতে নিয়োগ করা যায় তবে তারা ভাল করবে।

৪) সাম্প্রতিককালে বিদেশ থেকে সর্বশান্ত হয়ে ফিরছে। জমিজমা বিক্রি করে অবৈধভাবে বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা আমাদের দেশের লোকের মধ্যে বেশি। এরা বিদেশ থেকে ফিরে এসে দেশ ও সমাজের একটি বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এদেরেকে যদি জীবন বীমায় নিয়োগ করা যায় তবে তারা বীমায় ভাল করবে এবং দেশ ছেড়ে বিদেশে যাওয়ার ভুল বুঝতে পারবে।

৫) যারা সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক কর্মী এদের সহিত লোকের যোগাযোগ ও বিশ্বাস থাকে। ফলে তাদেরকে যদি বীমা পেশায় আনা যায় তারা ভাল ব্যবসা সংগ্রহ করতে পারবে।

৬) যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিক্রয়কর্মী যেমন মেজিক্যাল রিপ্রেজেনটেটিভ বা বিভিন্ন প্রসাধনী ও বেবী ফুডের রিপ্রেজেনটেটিভ এবং সেখানে তারা ভাল টাকা আয় করতে পারছেন না তাদেরকে জীবন বীমা পেশায় নিয়োগ করা যেতে পারে।

৭) যারা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সদ্য লেখাপড়া শেষ করে চাকরি খুঁজতে ব্যস্ত। এক পর্যায়ে যারা চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভুগছে তাদেরকে জীবন বীমা পেশায় আনতে পারলে তারা ভাল করবে। এখানে কিছূ ভাল ব্যবসা করতে পারলে অন্য চাকরি করতে চাইবে না।

৮) অবসার প্রাপ্ত ব্যক্তি, যারা বিভিন্ন চাকরি থেকে অবসর গ্রহণ করেছেন অথচ কিছূ করতে চান তাদেরকে বীমা পেশায় নিয়োগ করা যেতে পারে। বিশেষ করে সামরিক বাহিনী থেকে যারা অবসর গ্রহণ করেন তাদের বয়েস ও শরীর স্বাস্থ্য ভাল থাকে এবং তারা কঠোর পরিশ্রমী হয়, এদেরকে যদি বীমা পেশায় মনোনিবেশ করানো যায় তাহলে তারা যথেষ্ট ভাল করবে।

প্রশিক্ষণ (Training): নিয়োগের পরে যে বিষটি আসে তাহা হইল নিয়োগ প্রাপ্ত এজেন্টদের যথাযথ প্রশিক্ষণ। জীবন বীমা পেশায় মূল লক্ষ্য থাকবে নিয়মিত নিয়োগ ও নিয়োগপ্রাপ্তদের যথাযথ প্রশিক্ষণ। এই দুইটি জিনিস যত বেশি ফলোআপ করা যাবে বীমা কোম্পানীর উন্নতি উত্তরোত্তর তত বৃদ্ধি পাবে। এজেন্টদের প্রশিক্ষণের দুইটি পর্ব রয়েছে ১) তত্ত্বগত শিক্ষা (Theoretical Training) ২) ব্যবহারিক শিক্ষা (Practical Training) ।

১) তত্ত্বগত শিক্ষা (Theoretical Training): KASH, ইংরেজী এই চারটি অক্ষর দ্বারা একজন এজেন্টকে কিকি বিষয়ের উপর তত্বগত প্রশিক্ষণ দিতে হবে তাহা নিম্নে বুঝানো হলো ।

K = Knowledge (জ্ঞান): একজন এজেন্ট এর বীমা সর্ম্পকে পেশাগত জ্ঞান অর্জন খুবই দরকার। তাই সংগঠকদের উচিত একজন এজেন্টকে পেশাগত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তোলা ।

A = Aptitude (তৎপরতা):  একজন এজেন্টকে তাহার পেশায় প্রতি সুষ্ঠু প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আগ্রাহান্বিত ও তৎপর করে তোলা।

S = Skill (পারদর্শিতা): জীবন বীমা বিক্রয় একটি ব্যতিক্রমধর্মী কাজ। ফলে এই কাজকে সফল করে তোলার জন্য এজেন্টকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে। পারদর্শিতা ছাড়া আজকের প্রতিযোগিতামূলক বাজারে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।

H = Habit (অভ্যাস): মানুষ অভ্যাসের দাস: যে অভ্যাস গড়ে তোলা হবে মানুষ তার দাস হয়ে যাবে। এপর্যায়ে একজন এজেন্টকে চারিত্রিক গুণাবলী লক্ষণীয়। একজন এজেন্টের দৈনন্দিন অভ্যাস হওয়া উচিত-

১) পেশাগত পড়াশোনা ছাড়াও বিভিন্ন বই পুস্তক পড়া।

২) রাত্রে ঘুমানোর পূর্বে পরবর্তী দিনের Work plan তৈরী করা।

৩) প্রত্যহ নতুন নতুন ক্রেতা সংগ্রহ করা।

৪) ঠিকমত পলিসি রেকর্ড ফাইল মেইনটেইন করা।

২) ব্যবহারিক শিক্ষা (Practical Training)

PESOS হইল ফিলিপাইন্স এর মুদ্রার নাম । কিন্তু এখানে PESOS  ফর্মূলার সাহায্যে এজেন্টদের ব্যবহারিক শিক্ষার একটি সুন্দর উদাহরণ দেয়া হয়েছে।

P = To Prepare the agent for learning: একজন এজেন্ট যা শিক্ষা নিল এই পর্বে তা বাস্তবে প্রয়োগ করবেন। অর্থাৎ পলিসি বিক্রি করার জন্য বাজারে যাবে। এক্ষেত্রে যে এজেন্ট অন্তরায় বা প্রতিবন্ধকতার সম্মখুীন হবে সে সম্পর্কে সমাধানের নিয়ম দিতে হবে। সংগঠকগণ এর সমাধান বলে দিবেন।

E = to explain the agent the job is to master: একজন এজেন্টকে অবশ্যই পরিস্কার উদাহরণের সাহায্যে বুঝাতে হবে তার পেশাটি কি অর্থাৎ তার পেশা সম্পর্কে তাকে মাস্টার করে গড়ে তুলতে হবে।

S = To show him how to do the job: এই পর্যায়ে একজন সংগঠককে এজেন্টের সঙ্গে থেকে সম্ভাব্য ক্রেতা অনুসন্ধানের বাস্তব শিক্ষা দান করতে হবে এবং কিভাবে একটি ব্যবসা Close করতে হয় তা শিক্ষতে হবে।

O = Observation এজেন্ট যখন একা একা কাজ করবে তখন সে অনেক ভুল করবে। ফলে সংগঠককে Observe করতে হবে কি ধরনের ভুল সে করছে এবং তার সমাধান কি হবে।

S = Supervision যথাযথ সুপারিশ ছাড়া একজন এজেন্টকে যোগ্য হিসাবে গড়ে তোলা যাবেনা । এইজন্য প্রথম প্রথম একজন এজেন্ট যখন বাজারে কাজ করবে তখন তাকে Constant Supervision এর পর্যায়ে রাখতে হবে।

এইভাবে KASH ও PESOS ফর্মূলার সাহায্যে একজন এজেন্টকে প্রশিক্ষণ দিয়ে বীমা ব্যবসা করার জন্য মাঠে ছাড়তে  হবে। এই কাজটি আমাদের বীমা সংগঠক ও বীমা কোম্পানি ঠিক মত পালন করছে না। দেশে বীমার বাজার সৃষ্টি করতে হলে এবং বীমা কোম্পানীকে ভাল ব্যবসা করতে হলে, এই কাজটি খুব সতর্কতার সহিত ও আন্তরিকতার সহিত বাস্তবে প্রয়োগ করতে হবে।

পরিদর্শন (Supervision): এজেন্টদের প্রশিক্ষণ শেষে ফলপ্রসু পরিদর্শন খুবই দরকার। তিন প্রকারের এজেন্টদের পরিদর্শন করা যায়।

প্রথমত: সংগঠক সরাসরি মাঠ পর্যায়ে থেকে পরিদর্শন করতে পারেন।

দ্বিতীয়ত: এজেন্সি মিটিং বা কনফারেন্সের মাধ্যমে পরিদর্শন করতে পারেন। সপ্তাহের শেষে কোন একদিন মিটিং-এ বসে সংগঠক এজেন্টদের কাজের গতিধারা করতে পারে।

তৃতীয়ত: এজেন্টরা প্রতিদিনের যে রেকর্ড ডায়েরিতে লিখছেন সেই ডায়েরিতে দেখে তাদের কাজের ধারা নির্ণয় করে সে মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিতে পারেন।

নেতৃত্ব (Leadership): যোগ্য নেতৃত্ব হচ্ছে বীমা পেশায় একজন সংগঠকের বড় কাজ। নেতৃত্বে ত্রুটি থাকলে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় না। সব পেশার ক্ষেত্রে নেতৃত্বের অবদান অনস্বীকার্য । যোগ্য নেতৃত্ব ছাড়া সমস্ত পরিকল্পনা অর্থহীন হয়ে পড়ে। এখন নেতৃত্ব কি তাহা বলা দরকার।

নেতৃত্ব হচ্ছে লক্ষ্য নির্ধারণ ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি সংঘবদ্ধ কর্মী দলের কার্যাবলী প্রভাবিত করার প্রক্রিয়া।

নেতৃত্ব হচ্ছে এমন একটি দক্ষতা যার দ্বারা বিভিন্ন কর্মীর ভিতর প্রভাব বিস্তার করা যায় এবং এ প্রভাব ঘটিয়ে প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অর্জন করা যায়।

নেতৃত্ব কি তা উপরের সজ্ঞা তিনটি থেকে বুঝা গেল, এখন এই নেতৃত্ব যারা দিবেন অর্থাৎ সংগঠকদের কিছূ গুণাবলীর অধিকারী হতে হবে। তা না হলে এজেন্টরা তার নেতৃত্ব মানতে চাইবে না । এই গুণাবলী নিম্নরুপ:

১) একজন এজেন্টের যতগুলি গুণাবলী থাকা দরকার তা সংগঠকের মধ্যে থাকতে হবে। এজেন্টের গুণাবলীগুলি পূর্বে আলোচনা হয়েছে।

২) সংগঠকের মধ্যে Leadership ability থাকতে হবে।

৩) একজন সংগঠকের মধ্যে বিচার শক্তি থাকতে হবে। তাকে সর্বদা সবাই সমান, সবার প্রতি সমান ব্যবহার করার মানসিকতা থাকতে হবে।

৪) একজন মানুষের গুণাবলীর সঠিক বিশ্লেষণ করার ক্ষমতা তার ভিতর থাকতে হবে।

৫) সর্বদা সর্তকতা দৃষ্টি সংগঠনের প্রতি রাখতে হবে।

৬) সংগঠককে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী হতে হবে।

৭) একজন সংগঠকের দয়ালু মন ও তার ভিতর সমবেদনা থাকতে হবে।

৮) সংগঠকের ভিতর সামাজিক গুণাবলী থাকতে হবে।

৯) সর্বোপরি একজন সংগঠককে নিজের স্বার্থ ভুলে গিয়ে অন্যের স্বার্থ বড় করে দেখতে হবে।

১০) এগুলি ছাড়াও একজন সংগঠককে শক্ত নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা থাকতে হবে। সঠিক নিয়ন্ত্রণ ছাড়া একটি সংগঠন কখনো চালানো সম্ভব নয়। একটি সংগঠনের অধঃস্তনগণ যদি লাগামহীন ঘোড়ার মত  চলতে থাকে এবং সংগঠকের যদি তা নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা না থাকে তবে সেই প্রতিষ্ঠান তার নির্দিষ্ঠ লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে না।

লেখক: সানলাইফ ইন্স্যুরেন্সে কোম্পানি লিমিটেড’র এডিশনাল ম্যানেজিং ডাইরেক্টর অ্যান্ড সিএফও।