প্রিমিয়াম আয়ে প্রবৃদ্ধির হার নেমে গেছে লাইফে ২১.০৪%, ননলাইফে ১০.৫৪%

দেশের লাইফ ও ননলাইফ উভয় বীমাখাতে প্রিমিয়াম আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে পারছে না কোম্পানিগুলো। গত ৫ বছরে এ হার নেমে এসেছে আশঙ্কাজনক হারে। প্রবৃদ্ধি হার ননলাইফ খাতের তুলনায় লাইফ খাতেই বেশী নেমে গেছে। গত ৫ বছরে লাইফ বীমা খাতে প্রিমিয়াম আয়ে প্রবৃদ্ধির হার ২৮% শতাংশ থেকে নেমে এসেছে ৬.৯৬%। একই সময়ে ননলাইফে এ হার এসেছে ২১.০৫% থেকে ১০.৫৪%তে। বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স এসোসিয়েশন (বিআইএ)’র  গত ৫ বছরের প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। বিআইএ’র  প্রতিবেদন  পর্যালোচনা করে দেখা গেছে,  লাইফ খাতের প্রিমিয়াম আয়ে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২০০৯ সালে।  এ বছরে লাইফ খাতে প্রিমিয়াম আয় হয়েছিল ৪ হাজার ৫৯৫ কোটি  টাকা। ২০০৮ সালে এ খাতে প্রিমিয়াম আয় হয়েছিল ৩ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা। ২০০৮ সালের তুলনায় তা ২৮ % বেশি। এ বছর বেশ কয়েকটি জীবন বীমা কোম্পানি ব্যাপক হারে ভূয়া পলিসি করে তাদের প্রিমিয়াম আয় বেশি দেখায়। কোনো কোনো কোম্পানি ২০০৯ ও ২০১০ সালে শত শত কোটি টাকার ভূয়া পলিসি করে বলেও অভিযোগ ওঠে। ২০০৯ এ  লাইফ বীমা খাতে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি হলেও এর পরের বছর থেকে এই প্রবৃদ্ধি আর ধরে রাখতে পারেনি কোম্পানিগুলো। ফলে ২০১০ সালেই প্রবৃদ্ধির হার ৯% কমে গিয়ে দাড়ায় ১৯% এ। তবে প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি কমে ২০১২ সালে। নেমে আসে ৪.৬০% এ। এ বছর মোট প্রিমিয়াম আয় হয় ৬ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। যা ২০১১ সালে ছিল ৫ হাজার ৯৭৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ২০১১ সালে  প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ৯.০৫%। তবে সর্বশেষ হিসাব সমাপনী বছর ২০১৩ সালে প্রবৃদ্ধির হার কিছুটা বেড়ে হয়  ৬.৯৬%। ২০১১ সালের প্রবৃদ্ধির হার  ৪.৬০% থেকে ২. ৬৩ %  বাড়ে। উল্লেখ্য, এ হিসাব বছরে ১৩ টি নতুন কোম্পানি ব্যবসা শুরু করেছে। লাইফ খাতের প্রিমিয়াম আয়ে প্রবৃদ্ধির এ হার কমে যাওয়ার পিছনে যুগোপযোগী বীমা পণ্য না থাকা, গ্রাহকদের কাক্সিক্ষত মূনাফা না দেয়া, দক্ষ জনবলের অভাব, দাবি পরিশোধে অনীহা এবং  কোম্পানিগুলোর  দুর্নীতি ও অনিয়মকে দায়ি করছেন সংশ্লিষ্টরা। সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০০০ সালে ব্যবসায় আসা  কোম্পানিগুলোর মূল ব্যবসা ছিল ক্ষুদ্র বীমা।  এ বীমার আওতায় অধিকাংশ পলিসির মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে।  ফলে গ্রাহকদের পাওনা পরিশোধ করতে হচ্ছে। বেশীরভাগ কোম্পানি এ পাওনা পরিশোধে অনিয়মের আশ্রয় নিচ্ছে। যা লাইফ খাতে গ্রাহকদের মাঝে অনাস্থা  সৃষ্টি করেছে। এর প্রভাব পড়ছে কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম আয়ে। অন্যদিকে, নলাইফ বীমা খাতে গত ৫ বছরের মধ্যে প্রিমিয়াম আয়ে সবচেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয় ২০১০ সালে। প্রবৃদ্ধি হার ২১.১৬%। এ বছর খাতটির মোট প্রিমিয়াম আয় হয় ১ হাজার ৪৮৮ কোটি ৩০ লাখ  টাকা। ২০০৯ সালে মোট প্রিমিয়াম আয় হয়েছিল ১ হাজার ২২৮ কোটি ৪০ লাখ টাকা। এ বছর প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১০%। ২০১০ সালে প্রিমিয়াম আয়ে প্রবৃদ্ধির এ সর্বোচ্চ হার পরের বছরই (২০১১) কমে যায় ৫.১%।  এ বছর প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ১৬.০৬%। মোট প্রিমিয়াম আয় হয় ১ হাজার ৭২৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০১০ এর সর্বোচ্চ অবস্থাটি অর্ধেকেরও নিচে নেমে আসে ২০১২ সালে। প্রবৃদ্ধির হার নেমে দাঁড়ায় ১০% এ । এ বছর প্রিমিয়াম আয় হয় ১ হাজার ৮৯৯ কোটি ৯০ লাখ টাকা। তবে সর্বশেষ হিসাব সমাপনী বছর অর্থাৎ ২০১৩ সালে ননলাইফ বীমা খাতের এ প্রবৃদ্ধি কিছুটা বেড়ে দাড়িয়েছে ১০.৫২%। এ বছরে ননলাইফ বীমা খাতে মোট প্রিমিয়াম আয় দাড়িয়েছে ২ হাজার ৯৯ কোটি ৮০ লাখ টাকায়। উল্লেখ্য এ হিসাব বছরে নতুন ২টি ননলাইফ বীমা কোম্পানি ব্যবসা শুরু করে। বীমা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ননলাইফ বীমা ব্যবসা মূলত সরকার আরোপিত বাধ্যতামূলক বীমার ওপর নির্ভরশীল। ননলাইফ বীমা খাতে প্রিমিয়াম আয় নির্ভর করে শিল্প ও আমদানি রপ্তানি ব্যবসার সচলতার ওপর। ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাড়লে প্রিমিয়াম আয় বাড়ে, আমদানি-রপ্তানি কমলে প্রিমিয়াম আয় কমে। গত কয়েক বছর ধরে দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার বিরূপ প্রভাবেই ননলাইফ বীমা খাতে প্রিমিয়াম আয়ে কাক্সিক্ষত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে না বলে মনে করছে বীমা সংশ্লিষ্টরা। তবে ননলাইফ বীমা খাতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর নজরদারির ফলে বাকি ব্যবসা কমে যাওয়ায়  প্রিমিয়াম আয়ে ততটা ধস নামেনি। গত ২ বছর ধরে প্রিমিয়াম আয়ে প্রায় একই হারে প্রবৃদ্ধি হয়ে আসছে। দেশের ননলাইফ বীমা খাতের মোট বাজার প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার। তবে দুর্নীতিগ্রস্ত কোম্পানিগুলো ট্যালমহ ও ভ্যাট ফাঁকির পাশাপাশি উচ্চহারে কমিশন হাতিয়ে নেয়ার ফাঁক তৈরী করতে প্রিমিয়াম আয় কমিয়ে দেখায়।এ বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করা গেলে প্রিমিয়াম আয় আরো বাড়ানা সম্ভব হবে বলেও মনে করেন তারা। তারিখ-১৯-১২-২০১৪