কাজের আরম্ভ ও আপনার প্রস্তুতি: পর্ব- ৪

বীমা বিষয়ে একটি পাঠক সমাদৃত বই “যে ব্যবসা সম্মানের যে ব্যবসায় মূলধন লাগে না”। ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত বইটি লিখেছেন বাংলাদেশ জেনারেল ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি (বিজিআইসি)’র প্রতিষ্ঠাতা ম্যানেজিং ডাইরেক্টর এম এ সামাদ। ১৯৪৫ সালে তিনি কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে সম্মানসহ বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। অল ইন্ডিয়া রেডিও’তে কর্মজীবন শুরু হলেও ১৯৫১ সাল থেকে তিনি বীমাকে সার্বক্ষণিক পেশা হিসেবে গ্রহণ করেন।বাংলাদেশের বাইরে বীমার ওপর অনুষ্ঠিত বিভিন্ন সেমিনারে তিনি যোগদান করেন। ইউএনডিপি’র ফেলোশিপ নিয়ে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে সফর করেছেন এম এ সামাদ। ইন্স্যুরেন্স নিউজ বিডি’র পাঠকদের প্রয়োজনের দিকে লক্ষ্য রেখে এম এ সামাদ’র এই বই থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ধারাবাহিকভাবে হুবহু তুলে ধরা হলো। আজ থাকছে “কাজের আরম্ভ ও আপনার প্রস্তুতি” এর চতুর্থ পর্ব।

সাক্ষাৎকার পর্ব

সম্ভাব্য ক্রেতাদের সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যাদি সংগ্রহসূচক কার্ড তৈরির পরই শুরু হবে আপনার সাক্ষাৎকার পর্ব। এর আগে আপনাকে আবার সংগৃহীত কার্ডগুলো থেকেও কার্ড বাছাই করতে হবে। আপনার কাছে প্রচুর কার্ড রয়েছে এবং এরা সকলেই আপনার ভাবী ক্রেতা; এদের সবার সঙ্গেই আপনাকে সাক্ষাৎ করতে হবে। এখন প্রশ্ন: কার সঙ্গে আপনি আগে সাক্ষাৎ করবেন?

আপনার দৈনন্দিন কর্মসূচির মধ্যে সাক্ষাৎকারের যে পরিকল্পনা তৈরি করবেন, তার জন্য আপনাকে এদের মধ্য থেকে নাম বাছাই করে দিতে হবে।

এ প্রসঙ্গে দু’টি বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখুন:

(১) যে সব সম্ভাব্য ক্রেতার বীমা পলিসি নেই এবং থাকলেও তার মোট আয় এবং তাঁর পরিবারের প্রয়োজনের তুলনায় বীমা পলিসি কম।

(২) নিজের কোন আকস্মিক পরিবর্তন বা পরিবারের মধ্যে এমন কোন পরিবর্তন ঘটেছে, যেমন –

(ক) তিনি বাড়ি বন্ধক দিয়ে ঋণ গ্রহণ করেছেন,

(খ) সন্তান লাভ করেছেন,

(গ) পদোন্নতি ঘটেছে,

(ঘ) ব্যবসা বাণিজ্য প্রসার লাভ ঘটেছে ইত্যাদি।

আপনার সাক্ষাৎকারের দৈনন্দিন কর্মসূচিতে এদের নাম অগ্রভাগে রাখুন।

সাধারণত সাক্ষাৎকারের সময় নিম্নরূপ হলেই ভালো হয়:

(ক) সকাল আটটা থেকে দুপুর সাড়ে বারোটা,

(খ) অপরাহ্ন তিনটা থেকে বিকেল পাঁচটা,

(গ) সন্ধ্যা ছ’টা থেকে রাত সাড়ে আটটা,

দুপুর সাড়ে বারোটা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত থাকবে সচরাচর অফিসের কাজ।

অবশ্য সাক্ষাৎকারের কোন বাধাঁধরা নিয়ম বলে দেয়া কোনদিনই সম্ভব নয়। বিশেষ করে আমাদের সমাজের প্রচলিত অবস্থায় যেখানে অনেকেরই কাজ করা বা আহার-নিদ্রার কোন সুনির্দিষ্ট নিয়ম নেই। আমাদেরও তাই সম্ভাব্য ক্রেতার ইচ্ছে অনুযায়ী কাজ করতে হবে।

সাক্ষাৎকারের স্থান

সাক্ষাৎকার কোথায় ঘটবে-এটা নির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া যায় না। সম্ভাব্য ক্রেতার ইচ্ছে বা মানসিকতার পরিপ্রেক্ষিতে তার বাড়িতে কিংবা তার অফিসে সাক্ষাৎকার ঠিক করতে হবে। তবে আপনার লক্ষ থাকবে উক্ত সাক্ষাৎকারের স্থান, সময় ও পরিবেশ যেন হৃদ্যতাপূর্ণ আলোচনার অনুকূল থাকে। সম্ভাব্য ক্রেতার কোন রকম ব্যস্থতা না থাকলেই আপনি তার মনকে সম্পূর্ণভাবে আপনার আলোচনার মধ্যে নিবিষ্ট রাখতে পারবে। আপনার লক্ষ রাখতে হবে যে আলোচনার একটা নিভৃত পরিবেশ থাকা চাই এবং আপনার ভবিষ্যৎ কথাবার্তাতেও গ্রহণযোগ্য একটা সহজাত মানসিক প্রবণতা থাকা চাই।

অনেকেই অফিসে নানা কাজের মধ্যে ব্যস্ত থাকেন, তাই এসব আলোচনা তারা বাড়িতে করার পক্ষপাতী। অনেকে আবার বাড়িতে ব্যবসা সংক্রান্ত আলাপ মোটেও পছন্দ করেন না। তাদের সঙ্গে অফিসেই আলোচনা করতে হবে।

কোন কোন প্রতিষ্ঠাবান প্রতিনিধি মধ্যাহ্ন বা নৈশভোজের নিমন্ত্রণ করে তাঁর সম্ভাব্য ক্রেতার সঙ্গে ক্লাব বা সমিতিতে এ ধরণের আলোচনার ব্যবস্থা করে থাকেন।

সাক্ষাৎকার যেখানেই ঘটুক না কেন একটা কথা সব সময় মনে রাখতে হবে যে, অন্য লোকের উপস্থিতির সময় যত দূর সম্ভব আপনার আলোচনা বন্ধ রাখবেন। আপনার ভাবী ক্রেতার সঙ্গে সাক্ষাৎকারের জন্যে নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হয়ে যদি দেখতে পান যে তিনি অন্য লোকদের নিয়ে ব্যস্ত রয়েছেন, কখনো সে-মুহূর্তে আপনার বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন না  সেক্ষেত্রে অন্য কোন এক সময় যা দু’জনের জন্যই অনুকূল কোনো সময় নির্দিষ্ট করে চলে আসবেন। অন্যদের উপস্থিতিতে যদি আপনার সম্ভাব্য ক্রেতা আলাপ চালিয়ে যেতে চানও, আপনি যতদূর সম্ভব তখনকার মত সেই আলাপ স্থগিত রাখতে চেষ্টা করবেন। তাড়াহুড়োর মধ্যে কোন আলাপ-আলোচনা সার্থক হয়ে ওঠে না।

দৈনন্দিন সাক্ষাৎকারের কর্মসূচি

আপনার দৈনন্দিন সাক্ষাৎকারের ন্যূনতম একটি কর্মসূচি নিচে দেয়া হল:

সম্ভাব্য নতুন সাক্ষাৎকারের সংখ্যা--৪

দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় সাক্ষাৎকারের সংখ্যা--৪

পলিসি গ্রহণকারীদের সংখ্যা--২

নতুন সম্ভাব্য ক্রেতার নাম সংগ্রহ--৫

এ রকম অনেক দৃষ্টান্তও রয়ে গেছে যে, কোনো কোনো প্রতিষ্ঠাবান বীমা প্রতিনিধি দিনে বিশ থেকে পঁচিশটি সাক্ষাৎকারও করে থাকেন। বীমা জগতে সর্বজন স্বীকৃত নীতি হচ্ছে-যে বীমা প্রতিনিধি যত বেশি ফলপ্রসু ও সুনির্ধারিত সাক্ষাৎকার নিতে পারবেন তিনি তত বেশি ব্যবসা সংগ্রহ করতে সক্ষম হবেন।

এ প্রসঙ্গে একটা কথা বলা প্রয়োজন যে, আমাদের দেশে বেশিরভাগ বীমা কর্মীর অকৃতকার্যতার প্রথম ও প্রধান কারণ হচ্ছে, তারা দৈনন্দিন ন্যূনতম যে সাক্ষাৎকারের প্রয়োজন তাও করেন না। (চলবে...)