একচ্যুয়ারি সংকটে নতুন পণ্য নেই : জীবনবীমায় প্রসার নিয়ে আশঙ্কা

একচ্যুয়ারি সংকটে জীবনবীমাখাতে আসছে না নতুন কোনো পণ্য। নতুন পণ্যের অভাবে জীবনবীমায় ব্যবসা গ্রাহকদের মধ্যে আকর্ষণ সৃষ্টি করতে পারছে না। ফলে কোম্পানিগুলোতে অনৈতিক প্রতিয়োগিতা বাড়ছে। এমন অবস্থায় খাতটির প্রসার নিয়ে সংশয়ে আছেন বীমাসংশ্লিষ্টরা। বিশ্বব্যাপী জীবনবীমাখাতে প্রতিনিয়তই বাজারে ছাড়া হচ্ছে নতুন নতুন পণ্য। এক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই পার্শবর্তী দেশগুলোও।অথচ বছরের পর বছর ধরে মান্ধাতা আমলের জীবনবীমা পণ্য নিয়ে ব্যবসা করে যাচ্ছে দেশের জীবনবীমা কোম্পানিগুলো। নতুন কোম্পানিগুলোও চলছে একই কায়দায়। কোম্পানিগুলো নতুন হলেও তাতে নতুন কিছু নেই। পুরনো কোম্পানিগুলোর একেকটি বর্ধিত অফিস যেন এসব নতুন কোম্পানি। তবে নিবন্ধন পাওয়া জীবনবীমা কোম্পানিগুলোর প্রধান নির্বাহীরা ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডিকে জানান, তারাও চান নতুন পণ্য নিয়ে বাজারে প্রতিযোগিতা করতে। কিন্তু একচ্যুয়ারি না থাকায় তা তারা পারছেন না। অন্যদিকে  আইনি জটিলতার কারণে বিদেশী একচ্যুয়ারি দিয়ে নতুন পণ্যের ডিজাইন করতে পারছে না বলেও জানান তারা। জানা গেছে, জীবনবীমা কোম্পানিগুলো একক বীমা ও ক্ষুদ্র বীমা এই দুইভাগে জীবনবীমার বিভিন্ন পরিকল্প বিক্রি থাকে। একক বীমাখাতে মেয়াদী বীমাই সবচেয়ে জনপ্রিয়। এছাড়াও গ্রুপবীমা ও স্বাস্থ্য বীমার বিভিন্ন পরিকল্প থাকলেও ৫ থেকে ৬টি কোম্পানি ছাড়া অধিকাংশ কোম্পানিতেই এর কোনো কর্মকাণ্ড নেই। অন্যদিকে  ক্ষুদ্র বীমার পরিকল্পগুলোর মধ্যে  রয়েছে- গ্রামীনবীমা প্রকল্প, গনবীমা প্রকল্প, জনবীমা প্রকল্প, লোকবীমা প্রকল্প, ডিপিএস প্রকল্প, ইসলামী ডিপিএস প্রকল্প, গ্রামীণ ডিপিএস প্রকল্প, গ্রামীণ ইসলামী ডিপিএস প্রকল্প, বন্ধুবীমা প্রকল্প, সোনালীবীমা প্রকল্প, আল -আমিন বীমা প্রকল্প। তবে এসব বীমা পরিকল্পগুলোর প্রিমিয়ামহারসহ অন্যান্য শর্ত নির্ধারণে আইন মানা হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, বীমাআইন ২০১০ এর ৬৭ ধারা অনুসারে প্রতিটি জীবনবীমা কোম্পানিতে প্রয়োজন সাপেক্ষে ও কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত একজন একচ্যুয়ারি নিয়োগের কথা বলা আছে। দেশে বর্তমানে অনুমোদিত একচ্যুয়ারি আছেন মাত্র একজন। অন্যদিকে বর্তমানে সরকারি-বেসরকারি পুরনো ১৮টি ও নতুন ১৪টি মিলিয়ে জীবনবীমা কোম্পানির সংখ্যা ৩২টি। অন্যদিকে,আইডিআরএ বিগত ২০১২ সালের মার্চ মাসের দিকে জীবনবীমা কোম্পানি আধুনিকায়নের উদ্যেশ্যে প্রতিটি কোম্পানিতে এ্যাকচুয়ারি বিভাগ খোলার নির্দেশ দিলেও তা অধিকাংশ কোম্পানি বাস্তবায়ন করেনি। জানা গেছে, জীবনবীমা কোম্পানির আর্থিক ভিত্তি ও দায় মুল্যায়ণ,ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা,প্রডাক্ট ডিজাইন, লাইফ ফান্ড, গ্রাহক ও শেয়ার হোল্ডারের মুনাফা ও লভ্যাংশ নিরূপণ করে থাকে একচ্যুয়ারি। অর্থাৎ একটি জীবনবীমা কোম্পানিতে মূল ভুমিকায় থাকে একচ্যুয়ারি। সরকার জীবনবীমা কোম্পানির অনুমোদন দিলেও একচ্যুয়ারি  তৈরিতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বাংলাদেশে একচ্যুয়ারি তৈরিতে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও নেই। সরকারি বীমাশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বীমা একাডেমিতে ভারতের একটি একচ্যুরিয়াল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তিতে একচ্যুয়ারি শিক্ষা চালু করেছে। তবে সেখান থেকে এখনো কোনো ছাত্র একচ্যুয়ারি ডিগ্রি অর্জন করেনি। একই অবস্থা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান একচ্যুরিয়াল সোসাইটি অব বাংলাদেশের। এ প্রতিষ্ঠানটি দুরশিক্ষণের মাধ্যমে একচ্যুয়ারি শিক্ষায় ছাত্র ভর্তি করে থাকে। এ প্রতিষ্ঠান থেকেও কোনো ছাত্র একচ্যুয়ারি শিক্ষায় পূর্ণাঙ্গ সনদ পায়নি। তবে বেসরকারি এ প্রতিষ্ঠানটির প্রেসিডেন্ট এ. কে. ইলিয়াস হোসেন ইন্স্যুরেন্সনিউজবিডিকে জানান, শিগগিরই প্রতিষ্ঠানটি থেকে ৫ থেকে ৬ জন ছাত্র এ্যকচুয়ারী ডিগ্রি অর্জন করবে। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৩ জন একচুয়ারি আছেন। এরা হলেন, বীমাউন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান এম. শেফাক আহমেদ,জীবনবীমা করপোরেশনের বোর্ড সভার চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসেন ও প্রগতি লাইফইন্স্যুরেন্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাফর হালিম। এরমধ্যে জীবনবীমা কোম্পানিগুলোর ভ্যালুয়েশনের জন্য সোহরাব হোসেনই আইডিআরএ থেকে অনুমোদন নিয়েছেন। বাকিরা কেউ আইডিআরএ’র কাছে আবেদন করেন নি। প্রবাসী অপর একচ্যুয়ারি আফসারউদ্দিন আহমেদ এর আগে বাংলাদেশে কাজ করলে তিনিও কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো আবেদন করেননি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র। জানা গেছে, সম্প্রতি নিবন্ধন প্রবিধান অনুসারে নতুন বীমা কোম্পানির অনুমোদনের জন্য আবেদনকারি প্রতিটি কোম্পানিকেই ৫টি পরিকল্প জমা দিতে হয়েছে।আবেদনকারি ৭৭টি কোম্পানির ৫টি করে পরিকল্প তৈরি করে দেন কর্তৃপক্ষের অনুমোদিত ওই একজন একচ্যুয়ারি। তারিখ-২ মে, ২০১৪