দক্ষ ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ দিতে না পারায় সবচেয়ে বেহাল অবস্থায় পড়েছে বাজারে আসা নতুন জীবন বীমা কোম্পানিগুলো।বাজারের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তারা প্রিমিয়াম আয়ে কোনো সফলতাই দেখাতে পারছে না। অন্যদিকে বিপুল অংকের খরচের ভারে ইতোমধ্যেই ফান্ড সংকটেও ভূগছে। এসব কোম্পানির অনেকেরই প্রারম্ভিক ফান্ড ইতোমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে।
অভিযোগ রয়েছে, দক্ষ লোকের সংকটকে কাজে লাগিয়ে এক শ্রেনীর উদ্ধতন কর্মকর্তা এসব কোম্পানি থেকে মোটা অংকের বেতন-ভাতা হাতিয়ে নিচ্ছে। আইন সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় অনৈতিক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়ছে অনেকে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, দ্রুত এমডি নিয়োগ সংক্রান্ত প্রবিধান সংশোধন করে এমডি নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতা ও বয়স সংক্রান্ত নীতিমালার পরিবর্তন ও উপদেষ্টা নিয়োগের প্রবিধান করা না হলে দক্ষ লোকের অভাবে চরম অব্যস্থাপনার মধ্যে পড়বে বীমা খাত।
সূত্র মতে, মুখ্য নির্বাহী নিয়োগ ও অপসরাণ সংক্রান্ত প্রবিধান-২০১২ গেজেট আকারে প্রকাশ হয় ২০১৩ সালে।এ প্রবিধান অনুসারে কোনো ব্যক্তিকে এমডি পদে নিয়োগ দিতে হলে ৪ বছরের অনার্সসহ মাস্টার্স বা সমমানের ডিগ্রিধারী হতে হয়। এছাড়া ওই ব্যক্তিকে এমডির আগের পদে ৩ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতাসহ মোট ১৫ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এ প্রবিধানটি সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হলে আজও তা আলোর মূখ দেখেনি।এ প্রবিধান মানতে গিয়ে অধিকাংশ কোম্পানিকে যথাযথ যোগ্যতা নেই এমন লোককে নিয়োগ দিতে হচ্ছে।
এদিকে উপদেষ্টা নিয়োগ সংক্রান্ত প্রবিধানের খসড়া চুড়ান্ত করা হয় ২০১১ সালে। প্রবিধানটিও গেজেট আকারে প্রকাশ করা হযনি। ফলে কিছু কিছু কোম্পানি উপদেষ্টা নিয়োগ দিলেও এ বিষয়ে সুষ্পষ্ট নির্দেশনা না থাকায় ব্যবস্থাপনার মানউন্নয়নের জন্য উপদেষ্টা নিয়োগের উদ্যোগ নিতে পারছে না।
বীমা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে বীমাখাতে এমডি সংকটের যে কয়টি কারণ খুঁজে পাওয়া গেছে, তার মধ্যে মূ্খ্য নির্বাহী নিয়োগ ও অপসারণ সংক্রান্ত প্রবিধানের শর্ত নির্ধারনে আইডিআরএ’র হঠকারিতা, আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত আক্রোশ, বিশেষজ্ঞ লোকদের বয়স সীমা পার করা, কোম্পানিগুলোতে এমডির অব্যহতি আগের পদে লোক নিয়োগ না দেয়া।
অভিযোগ রয়েছে, জীবন বীমা খাতে এমডি পদে যোগ্যতার শর্তপূলন করে এবং বীমাখাত উন্নয়নে অবদান রাখতে পারে এমন বেশ কয়েকজন ব্যক্তি থাকলেও আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ তাদের প্রতি বিরাগভাজন হওয়ায় তাদেরকে কোনো কোম্পানি নিয়োগ দিতে পারছে না। মুলত কোম্পানিগুলো আইডিআরএ’র বিরাগভাজন হতে চায়না বলেই তাদের নিয়োগ করছে না।
সূত্র মতে, মূখ্য নির্বাহী নিয়োগের বয়স সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৭ বছর। এ খাতে বিশেষজ্ঞদের অধিকাংশ এ বয়স সীমা পার করেছে। ফলে ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে তাদের নিয়োগ দিতে পারছে না কোম্পানিগুলো। অপরদিকে কোম্পানিতে উপদেষ্টা নিয়োগের প্রবিধান না হওয়ায় যোগ্যতা সম্পন্ন এসব লোকদের উপদেষ্টাও করতে পারছে না কোম্পানিগুলো।তবে উপদেষ্টা নিয়োগ সংক্রান্ত খসড়া প্রবিধানে উপদেষ্টাদের বয়সও ৬৭ বছর রাখা হয়েছে।
বীমা সংশ্লিষ্টদের অভিমত, সরকার মুক্তিযোদ্ধাসহ সরকারি চাকুরেদের অবসরে যাওয়ার বয়সসীমা বাড়িয়ে দিয়েছে।এ পরিস্থিতিতে বীমাখাতের লোকদেরও অবসরের বয়সসীমা বাড়িয়ে দেয়া যুক্তিযুক্ত। এতে দক্ষ ও অভিজ্ঞরা এ খাতে নিয়োজিত থেকে খাতটিকে ব্যবসা সফল করতে অবদান রাখতে পারবে।
দেশের বীমাখাত এখন সংকটাপূর্ণ পরিস্থিতি পার করছে। এ অবস্থায় এ খাতকে রক্ষা করে এর উন্নয়ন ও ব্যবসা সফল করতে হলে মেধাবী ও দক্ষ লোকদের নিয়োজিত রাখা প্রয়োজন। এ জন্য আইন বা প্রবিধানের সংস্কারসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার ইতিবাচক ভূমিকা অপরিহার্য।
তারিখ: ২৫ নভেম্বর, ২০১৫