বিশ্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, প্রিমিয়াম হার নির্ধারণে ব্যবস্থা নিতে সেন্ট্রাল রেটিং কমিটি (সিআরসি) ও সাব কমিটিগুলোর পক্ষ থেকে একাধিক বার তাগিদ দেয়ার পরও অদৃশ্য কারণে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না আইডিআরএ ।
একাধিক বীমা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী অভিযোগ করেন, আইডিআরএ কোন রেট নির্ধারণ করে দিতে না পারায় বিদেশি রি-ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি থেকে অনেকেই রেট আনছে। এসব রেট যাচাই বাছাই করারও কোনও উদ্যোগ নেই আইডিআরএর।ফলে রেটের তারতম্য হচ্ছে উল্লেখযোগ্যভাবে। যার প্রভাবে বীমাখাতে প্রতিযোগিতামূলক বাজার না হয়ে বাজার হয়ে উঠছে একচেটিয়া। এ অবস্থা বন্ধে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিদেশি রি-ইন্স্যুরেন্স বন্ধ করে দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন নির্বাহীরা।
নির্বাহীরা জানায়, সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সঙ্গে রি-ইন্স্যুরেন্স করা বাধ্যতামূলক হলেও এখানেও রয়েছে ফাঁকি দেয়ার সুযোগ।সাধারণ বীমার সঙ্গে রি-ইন্স্যুরেন্সের চুক্তি প্রতিটি পলিসির বিপরীতে হিসাব না করে হিসাব করা হয় একটি কোম্পানির মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহের ওপর। ফলে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনের সঙ্গে রি-ইন্স্যুরেন্স করা কোন পলিসির চুক্তি কত হলো আর বিদেশী রি-ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি কত হলো তা খতিয়ে দেখার কোনও সুযোগ নেই।আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১০ অক্টোবর আইডিআরএর চেয়ারম্যান এম. শেফাক আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ১৪৪তম সভায় স্পেশাল রেট বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় কমিটি। মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০১১ সালের ১৮ আগস্ট বিশেষ সুবিধা বন্ধ করে ২৪ নং সার্কুলার জারি করা হয়।
পরবর্তীতে ২০১১ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর আবুল খায়ের মিল্ক প্রোডাক্ট লিমিটেড ২৪ নং সার্কুলারটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করে। হাইকোর্ট বেঞ্চ সার্কুলারটি ৩ মাসের জন্য স্থগিত করেন। এছাড়া বীমা আইন ২০১০ অনুসারে সেন্ট্রাল রেটিং কমিটি গঠন ছাড়া আইডিআরএর এধরনের সার্কুলার জারির ক্ষমতা কেন অবৈধ নয় তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে জানাতে বলে আদালত।
হাইকোর্টের আদেশের পর আইডিআরএর সদস্য জুবের আহমেদ খান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে (প্রজ্ঞাপন নং-৩৯, সূত্র: জিএডি ১০০৩/২০১১ সারক নং ৬৭৩তাং ১৫-৫-২০১৪) ২৪ নং প্রজ্ঞাপনটির সকল আদেশ বাতিল করা হয়। এতে নন-লাইফ বীমা কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম হারে বিশেষ সুবিধা বহাল রাখা হয়। তবে এমন অবস্থার জন্য আইডিআরএর খামখেয়ালীপনা ও আইন সম্পর্কে অজ্ঞতাকেই দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে গত বছরের জানুয়ারিতে সেন্ট্রাল রেটিং কমিটি (সিআরসি) প্রবিধান পাস করে সরকার। ওই বছরের এপ্রিল মাসে সিআরসি গঠনও করা হয়। কিন্তু বিশেষ মূল্যহার সংক্রান্ত ২৪ নং সার্কুলারের মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় রেটিং কার্যক্রম শুরু করতে পারে না নবগঠিত সিআরসি।প্রিমিয়াম হার নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণকারী কোনও নির্দেশনা না থাকায় এ সুযোগটি কাজে লাগায় কোম্পানিগুলো। অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে নন-লাইফ বীমা খাত।আইডিআরএর কাছে রেট চেয়ে আবেদন করেই ব্যবসা করতে থাকে। রেটটি যাচাইয়ে আইডিআরএর কোনও সুযোগ না থাকার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের খেয়াল খুশিমতো প্রিমিয়াম নির্ধারণ করে কোম্পানিগুলো। এতে কোম্পানিগুলোর প্রিমিয়াম আয়ে ও রাজস্ব আয়ে বিরূপ প্রভাব পড়ে। এ অবস্থা চলে আসছে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে।
তারিখ: ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪