পলিসি না করেই স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের নৌ বীমা দাবি ৯ কোটি টাকা
স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইনল্যান্ড ট্রানজিট ইন্স্যুরেন্সের ভূয়া পলিসি দেখিয়ে নৌ বীমা দাবি উত্থাপন করেছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। ১২ টি ভূয়া পলিসির বিপরীতে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ বীমা দাবি করেছে ৯ কোটি ১৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)র প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। অগ্নিকাণ্ডের দিন অর্থাৎ ২৮ নভেম্বর বা তার আগে স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ কোনো ইনল্যান্ড ট্রানজিট (নৌ বীমা) পলিসি করেনি বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করেছে আইডিআরএ।
স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের বীমা দাবি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করে আইডিআরএ। কমিটি গত জুলাইয়ে এ প্রতিবেদন দাখিল করে।
স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের সব বীমা পলিসি করা হয়েছে ওই গ্রুপেরই মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড ইন্সুরেন্সে। স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের এসব পলিসির পূণ:বীমা করা আছে সরকারি প্রতিষ্ঠান সাধারণ বীমা কর্পোরেশনে। মূলত বীমা দাবির এ টাকা পরিশোধ করতে হবে সাধারণ বীমা কর্পোরেশনকে। সরকারি এ বীমা প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যেই স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স এসব ভূয়া পলিসি তৈরি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ২৮ নভেম্বর গাজীপুরের কোনাবাড়ির স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের কারখানাগুলোতে আগুন লাগে। এরপর স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ বীমা প্রতিষ্ঠান স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সের কাছে ৪৪৫ কোটি টাকার দাবি উত্থাপন করে। এর মধ্যে রয়েছে নৌ-বীমার আওতায় ১২ টি ইনল্যান্ড ট্রানজিট বীমা পলিসি। এ ছাড়াও অগ্নিবীমার ১৬ টি পলিসির দাবি উত্থাপন করা হয়।
ইনল্যান্ড ট্রানজিট বীমার ১২টি পলিসি ২৮ নভেম্বর ইস্যু করেছে বলে দেখায় স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স। অথচ ২৮ নভেম্বর বা তার আগে কোনো ইনল্যান্ড ট্রানজিট পলিসি করে নাই স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপ। তবে, পলিসি পত্রে দেখানো হয়েছে এসব পলিসির প্রিমিয়াম নেয়া হয়েছে ২৮ নভেম্বর। ওই তারিখেই সবগুলো পলিসির প্রিমিয়ামের টাকা একটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে জমা করা হয়েছে বলেও দেখানো হয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২৮ নভেম্বর বা তার আগে কোনো ইনল্যান্ড পলিসি করা হয়নি। তারপরই এসব পলিসির ক্ষেত্রে আইডিআরএর ২৬ নং সার্কুলার ও ২৬ বি নং সার্কুলারের লংঘন হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ দুটি সার্কুলারের লংঘন হলে বীমা দাবি নাকচ করা যায় না। আইন লংঘনের জন্য জরিমানা করতে পারে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা। একদিকে পলিসি করা হয়নি বলে সিদ্ধান্ত দেয়া, অন্যদিকে সেসব পলিসিতে সার্কুলার ২৬ এর লঙ্ঘনের মন্তব্য করা উদ্দেশ্যমূলক মনে করছে বীমা সংশ্লিষ্ট মহল।
অন্যদিকে ২৬ নং সার্কুলার অনুসারে কোন বীমা কোম্পানির পরিচালকদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বীমা দাবি ২ দিনের মধ্যে আইডিআরএকে জানাতে হবে।কিন্তু স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের ইনল্যান্ড ট্রানজিট বীমার পলিসি সম্পর্কে তথ্য জানানো হয়েছে ১০ দিন পর ৮ ডিসেম্বর।
ইনল্যান্ড ট্রানজিট ইন্স্যুরেন্স এর আওতায় কারখানা থেকে লরি, ট্রাক, ট্রেনে বা পরিবহনে মাল ওঠানো থেকে অভ্যন্তরীণ গন্তব্যে পৌঁছানো পর্যন্ত মালামালের ঝুঁকি নেয়া হয়ে থাকে। তদন্ত প্রতিবেদনে দেয়া তথ্য অনুসারে এসব পলিসির মেয়াদ ছিল ৭ দিন। মালামাল পরিবহনের ঝুঁকি নেয়া হয় কারখানা থেকে চিটাগাং সমুদ্র বন্দর পর্যন্ত।
স্ট্যান্ডার্ড গ্রুপের বীমা দাবি নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় চলতি বছরের ২০ মার্চ তদন্ত কমিটি গঠন করে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ। প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্সকে দায়ি করে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বীমা আইন ২০১০ অনুসারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়। তবে অগ্নিকা-ে ক্ষয়-ক্ষতি নিরুপনে নিয়োগ পাওয়া জরিপকারীর প্রতিবেদন না পাওয়ায় ৬ মাসে এ বিষয়ে কোনো চুড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে পারেনি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
এদিকে বীমা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত ৭ দিনের মধ্যেই জরীপ প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। অথচ ১০ মাসেও জরীপ প্রতিবেদন দাখিল করেনি স্ট্যান্ডার্ড ইন্স্যুরেন্স।
তারিখ: ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪