অবৈধ কমিশনে ৩২ কোটি টাকা আয় করেছে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স

অবৈধ কমিশনের বিনিময়ে ৩২ কোটি টাকা প্রিমিয়াম আয় করেছে বেসরকারি নন লাইফ বীমা কোম্পানি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্স । এ আয় কোম্পানিটির গত বছরের প্রিমিয়াম আয়ের দ্বিগুনেরও বেশি।৬৫ শতাংশ কমিশন দিয়ে কোম্পানিটি এ ব্যবসা করেছে। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) র দূর্বলতার সুযোগে বাজারে অবৈধ এ কমিশন চালু করে তারা। এমনটাই অভিযোগ করেছেন বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা। প্রতিবেদকের প্রাপ্ত তথ্যমতে, ননলাইফ বীমা খাতে ৬৫ শতাংশ কমিশন প্রচলনের মূল হোতা বাংলাদেশ ন্যাশনাল ইন্স্যূরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। এ উচ্চহার কমিশন দিয়ে ব্যবসা করে বীমাখাতে এক অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছে কোম্পানিটি। জানা গেছে, অবৈধ হারে কমিশন দেয়া ছাড়াও বাকি ব্যবসা, ছাড়পত্র ছাড়া নিয়োগ, অনুমোদন ছাড়া অফিস খোলা, প্রধান কার্যালয়ে শাখা অফিস পরিচালনা নানা অনিয়ম করে যাচ্ছে কোম্পানি। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উচ্চহারের কমিশন দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ২০১৩ সালে কোম্পানিটি প্রিমিয়াম আয় করে আগের বছরের তুলনায় প্রায় আড়াইগুণ, ৩২ কোটি টাকা। ২০১২ সালে এ কোম্পানির প্রিমিয়াম আয় ছিল ১৩ কোটি টাকা। এক বছরের মাথায় দ্বিগুণ ব্যবসা করার মুল মন্ত্রই উচ্চ হারে কমিশন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ইন্স্যুরেন্স নিউজবিডির কাছে অভিযোগ করেন, ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সানাউল্লাহ মাসুম নিজেও বেনামে এজেন্সি লাইসেন্স দেখিয়ে অবৈধ কমিশনের ব্যবসা করে। এতে তার মাসিক আয় দাড়ায় ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা। অপর এক নির্বাহী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তার কোম্পানির দশ বছরের একজন গ্রাহককে ভাগিয়ে নিয়েছে ন্যাশনালের এমডি সানাউল্লাহ মাসুম। ওই গ্রাহকের ওই পলিসিটির প্রিমিয়াম এসেছে ৬০ লাখ টাকা। যার মধ্যে ৬৫ শতাংশ কমিশন হাতিয়ে নিয়েছে সানাউল্লাহ মাসুম নিজে। তবে ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ কমিশন দিলেও কোম্পানির প্রদর্শিত নথি পত্রে দেখানো হয় ১৫ শতাংশ কমিশন। এক্ষেত্রে দুই থেকে তিনটি রেজিস্টার সংগ্রহ করা হয়। অবৈধ কমিশন নেয়া হয় নগদ টাকায়। আর বৈধ ১৫ শতাংশ কমিশন নেয়া হয় ব্যাংক চেকের মাধ্যমে। ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের বিভিন্ন শাখার প্রিমিয়াম আয়ের নথি পর্যালোচনা করে এ চিত্র পাওয়া গেছে। ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের একটি শাখার ২০১৩ সালের প্রিমিয়াম আয়ের নথিতে দেখা গেছে, ৩০টি মটর বীমা (এ্যাক্ট লায়াবেলিটি বা থার্ট পার্টি) পলিসির মোট প্রিমিয়াম আয় দেখানো হয়েছে ২৪ হাজার ৭৭৬ টাকা। যার মধ্যে নেট প্রিমিয়াম ধরা হয়েছে ২১ হাজার ৫৩০ টাকা। এসব পলিসির বিপরীতে ১৫ শতাংশ হারে কমিশন দেখানো হয়েছে ৩ হাজার ২৬৯ টাকা। আর অপর রেজিস্টারে কমিশন দেয়া হয়েছে ৯ হাজার ৮৫০ টাকা। অর্থাৎ দুই খাত মিলিয়ে মোট কমিশন দেয়া হয়েছে ৬০ শতাংশ। এছাড়া এসব পলিসির প্রিমিয়াম অধিকাংশ কোম্পানিতে জমা হয়নি। দুএকটি পলিসির টাকা জমা হলেও তা হয়েছে দেরিতে। ন্যাশনাল ইন্স্যুরেন্সের যাত্রাবাড়ি শাখা, হাটখোলা শাখার অফিস পরিচালনা করা হচ্ছে প্রধান কার্যালয় থেকে। এছাড়া কোম্পানির উন্নয়ন বিভাগে এএমডি, ডিএমডি পর্যায়ের অধিকাংশ কর্মকর্তাকেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে ছাড়পত্র ছাড়াই। তারিখ: ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৪