অষ্টম শ্রেণি পাস বীমা এজেন্টও আইডিআরএর চেয়ারম্যান হতে পারেন !

অষ্টম শ্রেণির সার্টিফিকেট ও বীমা এজেন্ট হিসেবে ২০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলেই বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান বা সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেতে পারবেন। এক্ষেত্রে উচ্চতর শিক্ষায় শিক্ষিত কিংবা বীমা বা অন্যকোন দপ্তরে উচ্চপদে চাকরির অভিজ্ঞতার কোনো প্রয়োজন নেই। এতটুকু যোগ্যতাসম্পন্ন কাউকে না পাওয়া গেলে যোগ্যতার এ শর্তও শিথিল করতে পারবে সরকার। এমনটাই বলা হয়েছে, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইন - ২০১০ ( ২০১০ সনের ১২ নং আইন ) এ। বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ আইনের ৭ ধারার উপধারা ১ এ বলা হয়েছে ‘বীমা, ফিন্যান্স, ব্যাংকিং, মার্কেটিং, পরিসংখ্যান, হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, প্রশাসন বা আইনে অন্যূন ২০ (বিশ) বৎসরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কোন ব্যক্তি চেয়ারম্যান বা সদস্য হইবার যোগ্য হইবেন।’ এবং উপধারা ২ এ বলা হয়েছে ’উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থী পাওয়া না গেলে অভিজ্ঞতার সময়সীমা শিথিল করা যাইবে।’ এ আইনের ৫ ধারার উপধারা ২ এ বিশেষ শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে, ধারা (৭) এর বিধান সাপেক্ষে, লাইফ ইন্স্যুরেন্স বিষয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অন্যূন একজন এবং নন-লাইফ ইন্স্যুরেন্স বিষয়ে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন অন্যূন একজন ব্যক্তিকে কর্তৃপক্ষের সদস্য হিসাবে নিয়োগ করিতে হইবে।’

বীমা সংশ্লিষ্ট মহল বলেন, যেহেতু কর্তৃপক্ষের ২ সদস্য বীমাখাত থেকে নেয়া বাধ্যতামূলক এবং তাদের নিয়োগের শর্তে শিক্ষাগত যোগ্যতা এবং কোন স্তরে চাকুরী করেছে তা উল্লেখ নেই, কাজেই বীমার দালাল হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে সে সদস্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার যোগ্যতা রাখে। সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, ‘ বীমা কোম্পানিতে মূখ্য নির্বাহী নিয়োগ সংক্রান্ত প্রবিধানমালায় মূখ্য নির্বাহীর যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে অনার্সসহ মাষ্টার্স ডিগ্রি ও সংশ্লিষ্ট বীমা খাতে প্রথম শ্রেনীর ১৫ বছরের কাজের অভিজ্ঞতাসহ মূখ্য নির্বাহীর অব্যবহিত পরের পদে ৩ বছরের কাজের অভিজ্ঞতা। আরো উল্লেখ্য বীমা আইন ২০১০ এ মূখ্য নির্বাহী নিয়োগের বিধান করার এখতিয়ার দেয়া হয়েছে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে। অথচ নিয়ন্ত্রক সংস্থার সদস্য ও চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ প্রাপ্তদের শিক্ষাগত যোগ্যতা বা কাজের অভিজ্ঞতা বিষয়ে কোনো মাপকাঠি নেই।’ এমন অবন্থায় বীমা খাতের উন্নয়নে সরকারি এ সংস্থাটি কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে তা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেন তারা। একই সঙ্গে এ আইনের ফাঁক গলিয়ে অযোগ্য ও দুর্নীতিবাজ অনেকেই সদস্য পদে নিয়োগ পেতে পারেন বলেও আশঙ্কা করছেন তারা।

এসব বিষয়ে প্রখ্যাত বীমা বিশেষজ্ঞ এ. কে. এম আজিজুল হক চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আইন করার আগেই এসব বিষয়ে ভাবা উচিত ছিল। তিনি আরো বলেন, যাদের এ আইনটি করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল তারা দাড়ি কমা সেমিকোলন নিয়েই বেশি ব্যস্ত ছিলেন। ফলে আইনে অনেক অসঙ্গতি থেকে গেছে। ফলে আজ যারা নিয়ন্ত্রক সংস্থায় দায়িত্ব পেয়েছেন তাদের কাজের অভিজ্ঞতার বায়োডাটা খুজে পওয়া যায় না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নিয়ন্ত্রণ সংস্থায় যারা সদস্য বা চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পাবেন তাদের অবশ্যই উচ্চ শিক্ষিত এবং সর্বোচ্চ পদে চাকরির অভিজ্ঞতা থাকা উচিত। বীমা খাতের এক সাবেক নির্বাহি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও মন্ত্রণালয়ের বিষয়। এবিষয়ে কোনো মন্তব্য করলে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আবার আমাকে ধরবে।

তবে সদস্য ও চেয়ারম্যানের যে বেতন ভাতা নির্ধারণ করা হয়েছে তা খুবই কম বলে শিক্ষিত ও অভিজ্ঞরা নিয়ন্ত্রক সংস্থায় আসতে চায় না বলে মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে আইআরডিএর একজন সদস্য বেতন পান বাংলাদেশী টাকায় প্রায় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। ভালো লোক নিয়ন্ত্রক সংস্থায় না আসার পিছনে এটিও একটি কারণ বলে তিনি উল্লেখ করেন। এ বিষয়ে আইডিআরএর সদস্য মো. কুদ্দুস খানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি আইনে এ বিষয়টি আরও স্পষ্ট হতে পারতো বলে মন্তব্য করেন।

তারিখ: ১৮ জুলাই, ২০১৪