জীবনবীমা গ্রাহকদের মুনাফার ওপর করারোপ : আইডিআরএর ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ

বাজেটের নিয়ম অনুসারে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ-আইডিআরএর প্রস্তাব অনুসারেই বাজেটে এ কর ধার্য করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। বাজেট পাসের পর তা বিধি আকারে চুড়ান্ত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এ করারোপে বীমাকারীর স্বার্থ সংরক্ষণ বিধির ব্যাপক লংঘন হচ্ছে মনে করছেন বীমা বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ বীমাকারীর স্বার্থ সংরক্ষণকারী বিধি অবগত আছে কি না এ সম্পর্কে সন্দেহ ব্যক্ত করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

এনবিআর সূত্র জানা গেছে, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ধারায় ৫২ট যুক্ত করে মেয়াদ পূর্তির পর জীবন বীমা পলিসির পরিশোধিত প্রিমিয়ামের ওপর মুনাফা প্রদানের ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ মুনাফার ৫ শতাংশ করারোপের বিধান রাখা হয়েছে। তবে কোনো গ্রাহক মারা গেলে সে ক্ষেত্রে তার নমিনিকে কর দিতে হবে না। এ বিধান ১ জুলাই ২০১৪ থেকে কার্যকর হবে।

এনবিআর সূত্র আরো জানায়, ব্যাংকে সঞ্চয়কারিদের মুনাফার ওপর কর দিতে হয়। মূলত: ব্যাংকের এ সঞ্চয়কারিদের সঙ্গে বীমা গ্রাহকদের সমতা করতেই এ ধরণের বিধান করেছে সরকার। অথচ, বীমার সঞ্চয় আর ব্যাংকের সঞ্চয় এক নয়। বীমা একটি ঝুঁকি নির্ভর চুক্তি ভিত্তিক সঞ্চয়। জানা যায়, অধিকাংশ জীবন বীমা কোম্পানি গ্রাহকদের মুনাফা দিতে পারছে না। কিছু কোম্পানি ১৪ বছরেও মুনাফা ঘোষণা করতে পারেনি। অন্যদিকে কোনো কোনো কোম্পানি নামে মাত্র মুনাফা ঘোষণা করলেও তা গ্রাহক পাচ্ছে না। কেউ কেউ গ্রাহককে মুনাফা দেয়া তো দুরের কথা, নানা অজুহাতে গ্রাহকের জমা করা আসল টাকাই আত্মসাৎ করছে। এছাড়া কেউ কেউ নানা প্রতারণা অবলম্বন করে গ্রাহকের মুনাফার টাকা পরিচালক ও শেয়ার হোল্ডারদের লভ্যাংশ হিসেবে দিয়ে দিচ্ছে। এমন অবস্থায় কোনো কোনো জীবন বীমা কোম্পানি হয়ে ওঠছে গ্রামের দরিদ্র সাধারণ মানুষের সর্বশেষ সম্বলটুকু কেড়ে নেয়ার হাতিয়ার। গরীব গ্রাহকদের এসব টাকা লুটে খাচ্ছে কতিপয় কোম্পানির মালিক ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অথচ এসব হাজার হাজার নিরীহ গ্রাহকদের আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে সরকারের কোনো উদ্যোগ নেই। এতে বীমাকারীর স্বার্থ সংরক্ষণ বিধির ব্যাপক লংঘন হচ্ছে, যা অনভিপ্রেত। বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ বীমাকারীর স্বার্থ সংরক্ষণকারী বিধি অবগত আছে কি না এ সম্পর্কে সন্দেহ ব্যক্ত করছে সংশ্লিষ্ট মহল।

অভিযোগ রয়েছে, বীমা পলিসি কিনে গ্রাহকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে না। দু একটি কোম্পানি যাও মুনাফা দিচ্ছে তার ওপর কর আরোপ করায় উভয় দিকেই ক্ষতির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে গ্রাহক। বীমা সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বিশ্বব্যাপী জীবন বীমার গ্রাহকদের মুনাফা করের আওতামুক্ত থাকে। অথচ এ ধরণের সিদ্ধান্ত সরকার কেন নিতে যাচ্ছে তা বোধগম্য নয়। অন্যদিকে বীমা খাতের উন্নয়নে গঠিত বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এ ক্ষেত্রে বিপরীত ভূমিকা পালন করছে।

জানা গেছে, দেশে বর্তমানে ৩২টি জীবন বীমা কোম্পানি ব্যবসা পরিচালনা করছে। দেশের সরকারি জীবন বীমা করপোরেশনসহ ১৭টি পুরনো জীবন বীমা কোম্পানির অধিকাংশ গ্রাহকদের মুনাফা দিতে পারছে না। এর মধ্যে সম্প্রতি ১৪টি জীবন বীমা কোম্পানির অনুমোদন দেয়া হয়। এর আগে ২০০০ সালে বর্তমান আওয়ামীলী সরকারে আসলেওই ২০ টি জীবন বীমা কোম্পানির অনুমোদন দেয়া হয়। এসব কোম্পানি ব্যবসার কৌশল হিসেবে বেছে গ্রামের সাধারণ স্বল্প আয়ের মানুষদের । অতিরিক্ত মুনাফা লোভ দেখিয়ে এসব কোম্পানি ব্যাপক হারে পলিসি করে। যার ৭০ শতাংশই ইসলামী ক্ষুদ্র বীমার নাম দিয়ে। এসব গ্রাহকরা তাদের ন্যুনতম নঞ্চয় থেকে বীমা সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তি দিয়ে থাকে।

২০১৩ সালে জীবন বীমা খাতে মোট প্রিমিয়াম আয় হয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা। গত তিন বছর থেকেই প্রিমিয়াম আয়ে প্রবৃদ্ধি কমে গেছে।

তারিখ: ১৬ জুলাই ২০১৪