জানা গেছে, অফিসে না ওঠেই গত আড়াই বছরে অফিস ভাড়া দিয়েছে ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। অফিস সাজাতে ব্যয় হয়েছে আরো ৫ কোটি টাকার ওপরে। একই সঙ্গে বর্তমান অফিসটির ভাড়া গুনতে হয়েছে আরো প্রায় ৪০ লাখ টাকা। এভাবে অফিস ভাড়ার নামেই গচ্চা গিয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। নতুন এ অফিসটির ভাড়া বাবদ সাড়ে ১৪ লাখ টাকা বাদ দিলেও বিদ্যুৎ খরচের বাইরে জেনারেটর চালাতে খরচ হবে প্রতিমাসে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা।
যে কোন বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়ার আইন থাকলেও এ অফিস ভাড়া এবং এ সংশ্লিষ্ট কয়েক কোটি টাকা খরচ করতে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নেয়ার প্রয়োজন মনে করে নি আইডিআরএর কর্মকর্তারা। বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও সদস্যদের খামখেয়ালিতেই সরকারের এতগুলো টাকা এভাবে দরিয়ায় গিয়েছে বলে অভিযোগ ওঠেছে।
জানা গেছে, ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে সাধারণ বীমা করপোরেশনের মালিকানাধীন দিলখুশার এসবিসি টাওয়ারের ৯ তলায় ২ হাজার ২৪০ বর্গফুট অফিস ভাড়া নেয় আইডিআরএ। প্রতি বর্গফুটের ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ৭০ টাকা। এছাড়া প্রতি ২ বছর পর পর ৫ শতাংশ হারে ভাড়া বাড়ানোর শর্ত রয়েছে। তখন থেকেই ভাড়া গুণে আসছে আইডিআরএ।
নতুন এ অফিসের বিদ্যুৎ লাইন, অফিস ডেকোরেশন, ইনটেরিয়র ডিজাইনের জন্য টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয় ভাড়া নেয়ার ১০ মাস পর ২২ শে অক্টোবর। ওই টেন্ডার নোটিশে সময় বেধেঁ দেয়া হয় ৩ মাস। এ টেন্ডারও দেয়া হয় একাধিকবার। অবশেষে অটবিসহ আরো একটি কোম্পানিকে কাজ দেয়া হয়।
সাধারণ বীমা করপোরেশনের সম্পতি সংরক্ষণ বিভাগের ম্যানেজার তাজুল ইসলাম জানান, টাওয়ারটির প্রতিটি ফ্লোরে ১৫০ কিলোওয়াটের বিদ্যুৎ সরবরাহ আছে। ফ্লোরটিতে সেন্ট্রাল এসি চালাতে আরো ৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুতের প্রয়োজন বলে জানান তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ না থাকলে এসবিসি’র নিজস্ব জেনারেটর থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে থাকে ভাড়াটিয়ারা। কোনো ভাড়াটিয়া সেন্ট্রাল এসির জন্য জেনারেটর চালাতে চাইলে তা তাদের ব্যাপার।
আইডিআরএর এক কর্মকর্তা জানান, ফ্লোরটিতে বিদ্যুৎ সরবরাহ আছে ১৪০ কিলোওয়াট। এর চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে পারছে না ভবন মালিক। অন্যদিকে সেন্ট্রাল এসি যেভাবে স্থাপন করা হয়েছে তাতে আরও ৫০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ ছাড়া অফিস করা সম্ভব হবে না। ফলে জেনারেটর দিয়েই বাকি ৫০ কিলোওয়াটের চাহিদা পুরণ করতে হচ্ছে। এতে আইডিআর কর্তৃপক্ষ ২টি জেনারেটর কিনতে ব্যয় করছে প্রায় ৩০ লাখ টাকা। এছাড়া জেনারেটর স্থাপনেও ব্যয় হবে ৪ লাখ টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫০ কিলোওয়াট ক্ষমতার দুটি জেনারেটর বসাতে হবে। জেনারেটর চালাতে প্রতি ঘন্টায় ডিজেল খরচ হবে ৬ লিটার। অর্থাৎ ৬ লিটার ডিজেল ও অন্যান্য খরচসহ প্রতি ঘন্টায় ব্যয় হবে প্রায় ৫০০ টাকা। ৮ ঘন্টা অফিস চালালে প্রতি দিন জেনারেটর চালানো বাবদ ব্যয় হবে ৪ হাজার টাকা।
এ বিষয়ে আইডিআরএর নিয়োগ করা প্রকৌশলী সন্তোষ কুমারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কত টাকা এ খাতে ব্যয় হচ্ছে তা বলতে রাজি হননি। তবে অধিকাংশ কাজের বিল এখনো বকেয়া রয়েছে বলে জানান তিনি।
এদিকে বীমা খাত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষায় এবং বীমা খাতের উন্নয়নে এ টাকা ব্যয় হতে পারত। বীমা উন্নয়নে বিলাশ বহুল এ অফিস কতটা প্রয়োজন তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইডিআরএ এখনো জনবল নিয়োগ হয়নি, অধিকাংশ প্রবিধান অনুমোদন না হওয়ায় বীমা খাতের উন্নয়নে নতুন এ সংস্থাটি কোনো কাজেই আসেনি। গত ৩ বছরেও বীমা খাতের উন্নয়নে কোনো ভূমিকাই রাখেনি সংস্থাটি। বরং প্রশাসনিক অদক্ষতা ও খাতটি উন্নয়নে কী ধরনের নির্দেশ জারি করার প্রয়োজন তা বিবেচনা না করে নিজেদের খেয়াল খুশিমত সার্কুলার জারি করে পুরো বীমা খাতটিতেই বিশৃঙ্ঘল অবস্থায় ফেলেছে। অত্যাধুনিক অফিস এ খাতের উন্নয়নে কী ভূমিকা রাখবে না কর্মকর্তাদের পকেট ভারি করবে তা খতিয়ে দেখা দরকার। আইডিআরএর কর্তাব্যক্তিরা অর্থমন্ত্রীর ছত্রছায়ার লোক বলে এতগুলো টাকা অপচয়ের পরও তা নিয়ে কেউ মূখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না বলেও অভিযোগ সংশ্লিষ্ট মহলের।
জানা গেছে, প্রতিবছর নিরীক্ষা করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও ৩ বছরেও সংস্থাটিতে কোনো নীরিক্ষা করা হয়নি। ফলে আর্থিক আয় ব্যয়ের হিসাব নেই, এমন অভিযোগও রয়েছে বীমাখাতের এ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির বিরুদ্ধে ।
জানা যায়, সংস্থাটির চেয়ারম্যান এম. শেফাক আহমেদ অ্যাকচুয়ারি অর্থমন্ত্রীর ভাগিনা হিসেবে পরিচিত। এর আগে তার মেয়াদ শেষ হয় চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি। তিনি আবারো নিয়োগ পান ৮ এপ্রিল। তাকে বসাতেই সংস্থাটিতে ৪ মাস চেয়ারম্যানের পদে কোনো নিয়োগ দেয়া হয়নি। প্রথমবার দায়িত্ব শেষ হলে তিনি চেয়ারম্যানের কক্ষে তালা দিয়ে যান। এ ৪ মাস চেয়ারম্যানের কক্ষ তালাবদ্ধ ছিল। এ ছাড়া আইডিআরএ সদস্য নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে কমপক্ষে ২ জন অর্থমন্ত্রীর নিজের লোক বলেও জানা গেছে।
অর্থমন্ত্রীর ছত্রছায়ায় শেফাক আহমেদ আইডিআরএর চেয়ারম্যান হওয়ায় বীমা খাতের নিয়ন্ত্রণ এখন সিলেটের কয়েকজনের এক গ্রুপের হাতে। এতে রয়েছেন প্রগ্রেসিভ লাইফের সাবেক এমডি এমএ করিম, গ্রীন ডেল্টার নাসির এ চৌধুরী এবং অর্থমন্ত্রীর আপন ছোট ভাই এ এমএ মুইজ। নাসির চৌধুরীর মেয়ে ফারজানা চৌধুরীকে গ্রীন ডেল্টার এমডি ও সিইও হিসেবে অনুমোদন দেয়ার শর্তে শেফাক আহমেদকে দ্বিতীয় মেয়াদে আইডিআরএর চেয়ারম্যান করার তদ্বির করেন নাসির চৌধুরী এবং মুইজ, এমন অভিযোগও রয়েছে।
জানা গেছে, আইডিআরএর আয়ের উৎস বীমা এজেন্টদের লাইসেন্স ফি , বীমা কোম্পানিগুলোর নিবন্ধন নবায়ন ফি। এ খাতগুলো থেকে আইডিআরের বার্ষিক আয় ২৭ থেকে ২৮ কোটি টাকা।
তারিখ: ৩ জুলাই. ২০১৪