রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বীমা সুবিধা দ্বিগুণ বৃদ্ধি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিমানে ভ্রমণকালে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের বীমা সুবিধা আগের তুলনায় দ্বিগুণ করা হয়েছে। সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের বেতন-ভাতা এবং সুবিধা প্রায় দ্বিগুণ করে পৃথক ৫টি বিল পাস করে জাতীয় সংসদ।

বিলে উল্লেখ করা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি বিমানে ভ্রমণ করলে তার বীমার জন্য আগের ১৫ লাখ টাকার পরিবর্তে ২৭ লাখ টাকা পাবেন। অর্থাৎ বিমানে ভ্রমণকালে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হলে সর্বোচ্চ ২৭ লাখ টাকা পর্যন্ত ক্ষতিপূরণ পাবেন। আর প্রধানমন্ত্রীর বিমান ভ্রমণে বীমা সুবিধা বাড়িয়ে ১৪ লাখ টাকার পরিবর্তে ২৫ লাখ টাকা করা হয়েছে।

বিমান ভ্রমণে স্পিকারের বীমা সুবিধা ১০ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৬ লাখ টাকা, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে পূর্ণ মন্ত্রী ও সমমর্যাদার উপদেষ্টা, প্রতিমন্ত্রী ও সমমর্যাদার উপদেষ্টা, উপমন্ত্রীদের ৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮ লাখ টাকা ও সংসদ সদস্যদের ৫ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকা করা হয়েছে।

পাস হওয়া অন্যান্য বিলগুলো হচ্ছে- ‘রাষ্ট্রপতির (বেতন-ভাতা ও সুবিধাদি) (সংশোধন) বিল-২০১৬’ এবং ‘প্রধানমন্ত্রীর (বেতন-ভাতা ও সুবিধাদি) (সংশোধন) বিল-২০১৬’, স্পিকার এবং ডেপুটি স্পিকারের (বেতন-ভাতা ও সুবিধাদি) (সংশোধন)বিল-২০১৬, দ্য মিনিস্টারস, মিনিস্টারস অব স্টেট অ্যান্ড ডেপুটি মিনিস্টারস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল ২০১৬, মেম্বারস অব পার্লামেন্ট (রেমুনারেশন অ্যান্ড অ্যালাউন্সেস) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল ২০১৬।

এসব বিলের প্রথম অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, নতুন হারের এই বেতন কার্যকর হয় গত বছরের পহেলা জুলাই থেকে। তবে ভাতা কার্যকর হবে চলতি বছরের পহেলা জুলাই থেকে। এর আগে ২০০৯ সালে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রীদের বেতন বাড়ানো হয়েছিল।

রাষ্ট্রপতি: সদ্য সমাপ্ত দশম জাতীয় সংসদের দশম অধিবেশনে পাস হওয়া বিল অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির বেতন ৬১ হাজার ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। এছাড়া সুবিধাদি ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার পরিবর্তে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী: প্রধানমন্ত্রীর (বেতন-ভাতা ও সুবিধাদি) (সংশোধন) বিলে প্রধানমন্ত্রীর বেতন ৫৮ হাজার ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন সুবিধা ও ভাতা বাড়িয়ে যথাক্রমে ৫০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা এবং ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা বাড়িয়ে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে গেলে প্রধানমন্ত্রীর দৈনিক ভাতা ১ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা ও স্বেচ্ছাধীন তহবিলের আকার ১ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে দেড় কোটি টাকা করা হয়েছে।

স্পিকার: স্পিকারের বেতন ৫৭ হাজার ২০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১ লাখ ১২ হাজার টাকা, ব্যয় নিয়ামক ভাতা ৮ হাজার থেকে বৃদ্ধি করে ১৩ হাজার টাকা, বিমানযোগে ভ্রমণকালে বিমা কভারেজ ১০ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৬ লাখ টাকা, দৈনিক ভাতা ১ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৩ হাজার টাকা এবং স্বেচ্ছাধীন তহবিল ১০ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১১ লাখ টাকা করা হয়েছে।

ডেপুটি স্পিকার:  ডেপুটি স্পিকারের বেতন ৫৩ হাজার ১০০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা, ব্যয় নিয়ামক ভাতা ৬ হাজার টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১০ হাজার টাকা, বিমানযোগে ভ্রমণকালে বিমা ৫ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৮ লাখ টাকা, দৈনিক ভাতা ৭৫০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২ হাজার টাকা এবং স্বেচ্ছাধীন তহবিল ৮ লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১০ লাখ টাকা করা হয়েছে।

মন্ত্রী-উপদেষ্টা: মন্ত্রিসভার সদস্যদের মধ্যে পূর্ণ মন্ত্রী  ও সমমর্যাদার উপদেষ্টাদের বেতন ৫৩ হাজার ১০০ থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা করা হয়েছে। মন্ত্রীদের বিমানভ্রমণে বীমার সীমা ৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৮ লাখ টাকা, স্বেচ্ছাধীন তহবিলের আকার ৪ লাখ থেকে বাড়িয়ে ১০ লাখ টাকা এবং দৈনিক ভাতা ৭৫০ থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করা হয়েছে। মন্ত্রীদের ব্যয় নিয়ামক ভাতা ৬ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

এছাড়া মন্ত্রীরা বেসরকারি বাড়িতে বাস করলে বাসা ভাড়া পাবেন ৮০ হাজার টাকা। আগে এর পরিমাণ ছিল ৪৫ হাজার টাকা। তবে মন্ত্রীরা স্বেচ্ছায় বেসরকারি বাড়িতে বসবাস করলে এখন ২৫ হাজার টাকা ভাতা পান।

প্রতিমন্ত্রী: প্রতিমন্ত্রী ও সমমর্যাদার উপদেষ্টাদের বেতন ৪৭ হাজার ৮০০ থেকে বাড়িয়ে ৯২ হাজার টাকা করা হয়েছে। প্রতিমন্ত্রীদের ব্যয় নিয়ামক ভাতা ৪ হাজার থেকে বেড়ে সাড়ে ৭ হাজার টাকা, বেসরকারি বাড়িতে বসবাসের ক্ষেত্রে ভাতা ৪০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭০ হাজার, বিমানভ্রমণে বীমার সীমা ৫ লাখ থেকে ৮ লাখ, দৈনিক ভাতা ৭৫০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকা এবং স্বেচ্ছাধীন তহবিলের আকার ৩ লাখ থেকে বেড়ে সাড়ে ৭ লাখ টাকা হচ্ছে।

উপমন্ত্রী: উপমন্ত্রীর সম্মানী ৪৫ হাজার ১৫০ থেকে বাড়িয়ে ৮৬ হাজার ৫০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া উপমন্ত্রীদের ব্যয় নিয়ামক ভাতা ৩ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা, বেসরকারি বাড়িতে বসবাসের ভাতা ৪০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭০ হাজার টাকা, বিমান ভ্রমণে বীমার সীমা ৫ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৮ লাখ টাকা, দৈনিক ভাতা ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং স্বেচ্ছাধীন তহবিলের পরিমাণ ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। পরে বিলগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

সংসদ সদস্য: বিলে সংসদ সদস্যদের বেতন ২৭ হাজার ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ হাজার টাকা, দৈনিক ভাতা ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৭৫০ টাকা, মাসিক ব্যয় নিয়ামক ভাতা ৩ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার টাকা, স্বেচ্ছাসেবী তহবিল ৩ লাখ থেকে বাড়িয়ে ৫ লাখ টাকা, মাসিক লন্ড্রি ভাতা ১ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা এবং

ক্রোকারিজ ইত্যাদি মাসিক ভাতা ৪ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬ হাজার টাকা, নির্বাচনী এলাকার মাসিক খরচ ৭ হাজার ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার ৫০০ টাকা, মাসিক পরিবহণ খরচ ৪০ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭০ হাজার টাকা, বার্ষিক অভ্যন্তরীণ ভ্রমণ খরচ ৭৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

এছাড়া অফিস খরচ ৬ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৯ হাজার টাকা, অধিবেশনকালীন যাতায়াত ভাতা ২০০ টাকা, অন্যান্য সময় ৭৫ টাকা হারে পাবেন। অধিবেশনকালীন অ্যালাউন্স ৮০০ টাকা, বীমা সুবিধা ১০ লাখ টাকা, টেলিফোন ভাতা ৭ হাজার ৮০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৭০ টাকা পাবেন।