আবদুর রহমান: পলিসি বিক্রিতে ব্যাংকের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহৎ বীমা বাজার ভারতে। দেশটিতে বীমা প্রতিনিধির সংখ্যা কমে যাওয়ার পাশাপাশি বাড়ছে ব্যাংকাস্যুরেন্সের সংখ্যা। সম্প্রতি ভারতের বেশ কিছু ব্যাংক একাধিক বীমা কোম্পানির পলিসি বিক্রির অনুমোদন পেয়েছে।
এর আগে ব্যাংকগুলো শুধুমাত্র একটি জীবন বীমা, একটি সাধারণ বীমা ও একটি স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানির পলিসি বিক্রি করতে পারত। এদিকে পলিসি বিক্রিতে প্রতিনিধির চেয়ে ব্যাংকিং চ্যানেলের ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করে দিয়েছে দেশটির বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা।
ইন্স্যুরেন্স রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া (আইআরডিএআই) এর সদস্য (লাইফ ইন্স্যুরেন্স) নিলেশ সাথী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, খুব শিগগিরই ২৫-৩০টি ব্যাংক একাধিক বীমা কোম্পানির পণ্য বিতরণ শুরু করবে। গত মাস থেকে ব্যাংকগুলোকে তিনটি জীবন বীমা, তিনটি সাধারণ বীমা এবং তিনটি স্বাস্থ্য বীমা কোম্পানির সঙ্গে কাজ করার অনুমোদন দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি খাতের অধিকাংশ প্রধান ব্যাংক বীমা কোম্পানিগুলোর সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (এসবিআই), ইউনিয়ন ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, ব্যাংক অব বরোদা, কানাড়া ব্যাংক, ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক, অন্ধ্র ব্যাংক, আইসিআইসিআই ব্যাংক ও আইডিবিআই ব্যাংক।
চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে সারস্বত ব্যাংকের সঙ্গে অংশীদারিত্বের ঘোষণা দিয়েছে ফিউচার জেনারেলি লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। ব্যাংকটি এইচডিএফসি লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির জীবন বীমা পলিসিও বিক্রি করে। গ্রামীণ বীমা এবং ক্ষুদ্রবীমা জোরদার করতে গত মাসে ১০টি মাঝারি ও ছোট আকারের ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করার ঘোষণাও দিয়েছে ফিউচার জেনারেলি।
শিল্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিরলা সান লাইফ, রিল্যায়ান্স লাইফ, বাজাজ আলিয়াঞ্জ, এইগন লাইফ এবং শ্রীরাম লাইফের মতো নন-ব্যাংক প্রমোটেড বীমা কোম্পানিগুলো একইভাবে শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকগুলোর সঙ্গে এই ব্যবস্থা চালু করতে পারে।
শ্রীরাম লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনোজ জেইন বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন, “আমাদের কোন ব্যাংকাস্যুরেন্স অংশীদার নেই। আমরা এর অভাব বুঝতে পেরেছি, খুব তাড়াতাড়ি ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত হতে যাচ্ছি। ক্ষুদ্র আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমাদের প্রয়োজন। এরইমধ্যে আমরা দু’টির সন্ধান পেয়েছি।”
এদিকে পলিসি বিক্রিতে ব্যাংকিং চ্যানেলের ওপর বেশি নির্ভরশীল হওয়ায় জীবন বীমা কোম্পানিগুলোকে সতর্ক করে দিয়েছে বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইআরডিএআই। বলা হয়েছে, রিজার্ভ ব্যাংক (আরবিআই) যদি কোন কারণে ব্যাংকগুলোকে পলিসি বিক্রিতে বাধা দেয় তখন ব্যাংকের ওপর নির্ভরশীল বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর পলিসি বিক্রিতে বড় ধরণের ধাক্কা লাগবে।
বর্তমানে ভারতের বেসরকারি বীমা কোম্পানিগুলোর পলিসি বিক্রিতে ব্যাংকিং চ্যানেল প্রভাবশালী পদ্ধতিতে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে বীমা খাতের প্রধান শক্তি এজেন্ট ও এজেন্সির সংখ্যা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থায় গত এপ্রিলে মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের সভা ডেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যাংকাস্যুরেন্স নিয়ে এই উদ্বেগ প্রকাশ করে।
তবে বীমা কর্মকর্তারা বলছেন, ব্যাংকাস্যুরেন্স পদ্ধতি উন্নত বাজারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। ইউরোপে বীমা পলিসি বিক্রির প্রভাবশালী মাধ্যম হলো ব্যাংক। এশিয়াতেও তাদের অংশীদারিত্ব বাড়াচ্ছে।
আইআরডিএআই’র বার্ষিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০১৩-১৪ তে ব্যাংকের মাধ্যমে প্রিমিয়াম সংগ্রহ হয়েছে ৪৭.৩৭ শতাংশ। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১২-১৩ তে এর পরিমাণ ছিল ৪৩.০৮ শতাংশ। এদিকে ২০১২-১৩ তে প্রতিনিধিদের মাধ্যমে প্রিমিয়াম সংগ্রহ হয়েছিল ৩৯.৬৮ শতাংশ। তবে ২০১৩-১৪ তে এর পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫.৭৩ শতাংশ।