দারিদ্র বিমোচনে কার্যকর কৌশল স্বাস্থ্য বীমা : উদ্যোগ নেই সরকারের
দারিদ্র বিমোচনে স্বাস্থ্যবীমা চালু করার বিষয়টি গুরত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। শুধু প্রবৃদ্ধি দিয়েই দারিদ্র বিমোচন সম্ভব নয়। দারিদ্র বিমোচন কর্মসূচিতে অন্যান্য কৌশলের তুলনায় স্বাস্থ্যবীমা বেশি কার্যকর বলে মনে করছেন গবেষকরাও । অথচ স্বাস্থ্য বীমা নিয়ে সরকার এখনও কোনো উদ্যোগ নেয়নি। দেশের বীমা কোম্পানিগুলোরও স্বাস্থ্যবীমা চালুর বিষয়ে কোনো আয়োজন নেই। বাজেট পূর্ব এক আলোচনায় স্বাস্থ্যবীমা চালুর কথা বলেন অর্থমন্ত্রী। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়লেও স্বাস্থ্যবীমা নিয়ে কোনো পরিকল্পনার কথা বলা হয়নি। বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ১১ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৩-১৪ অর্থ বছরের চেয়ে ১ হাজার ১৫১ কোটি টাকা বোশি। আগের অর্থবছরে স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংক গ্রুপের সাম্প্রতিক প্রকাশনায় বলা হয়েছে, প্রবৃদ্ধি দারিদ্র বিমোচনের জন্য অপরিহার্য। কিন্তু শুধুমাত্র প্রবৃদ্ধি দিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে চরম দারিদ্র দূর করা যাবে না। প্রবৃদ্ধি অল্প কিছু লোককে দারিদ্র থেকে তুলে আনতে পারবে। কিন্তু অনেক লোক চরম দারিদ্রের মধ্যে এমন একটা অবস্থায় থাকবে যেখানে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন করা হবে খুবই কঠিন। এ প্রকাশনায় দারিদ্র বিমোচনের নতুন যেসব কৌশলের সুপারিশ করা হয়েছে তার মধ্যে কম আয়ের লোকদের জন্য স্বাস্থ্যসেবার আওতা বৃদ্ধি করা অন্যতম। এ ছাড়া শহরের পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থার উন্নয়ন, প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষিকাজ ও অন্যান্য কাজে পানির সুষ্ঠু ব্যবহারের নিশ্চয়তা এবং বেকার যুবকদের জন্য কল্যাণমূলক কাজের প্রকল্প সম্প্রসারণ করা। বিশ্বব্যাংক গ্রুপ প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেছেন, প্রত্যেকটি দেশ একই হারে বিশ বছর ধরে প্রবৃদ্ধি অর্জন করে এবং যদি আয়ের বন্টন একই রকম থাকে তাহলে বিশ্ব দারিদ্র ২০৩০ সালের মধ্যে ১০% কমবে। কিম বলেন, তবে এটাই সাধারণভাবে যথেষ্ট নয়। চরম দারিদ্রকে নিরসন করতে যাদের আয় প্রতিদিন ১.২৫ ডলারের নীচে তাদের সংখ্যা ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন করে কমাতে হবে। এর অর্থ হচ্ছে পরবর্তী ১৬ বছর পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে ১ মিলিয়ন লোককে দারিদ্র থেকে বের করে আনতে হবে। এ জন্য আমাদের প্রয়োজন আরো কর্মসূচী গ্রহণ করা। বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান অর্থনীতিবিদ কওসিক বসু বলেছেন, দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজন দৃঢ়সংকল্প, আরও নতুন ধারণা। পাকিস্তান স্টেট ব্যাংকের সাবেক গর্ভনর ও বিকন হাউস জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর শহীদ হাফিজ কারদার সম্প্রতি দারিদ্র বিমোচনে স্বাস্থ্যবীমা চালুর প্রস্তাব করেছেন। পাকিস্তানের প্রভাবশালী পত্রিকা ডন এ লেখা এক প্রবন্ধে তিনি বলেন, স্বাস্থ্যখাতে সরকারের ব্যয় বাড়ালে তা দারিদ্র বিমোচনে বেশি কার্যকর হবে। অন্যদিকে স্বাস্থ্যখাতে সরকারের খরচ কমাতে সহায়ক হতে পারে স্বাস্থ্যবীমা। তিনি বলেন, দারিদ্র বিমোচন এবং স্বাস্থ্য পরিচর্যার ফলাফল পারস্পারিকভাবে সম্পর্কিত। উন্নত স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা দারিদ্র বিমোচনে অবদান রাখে এবং বিপরীত ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসেবায় কাক্সিক্ষত উদ্যোগের অভাব দারিদ্র বিমোচনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক পরিচালক পুনাম ক্ষেত্রপাল সিং বলেছেন, স্বাস্থ্য সেবার অভাবে দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে প্রতি বছর এক তৃতীয়াংশ দারিদ্র বাড়ছে। স্বাস্থ্যসেবা সবার জন্য করতে হলে কম খরচে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে স্বাস্থ্য বীমা চালু করতে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা সহায়তা করতে আগ্রহী বলেও জানান তিনি।
মাইক্রোইন্স্যুরেন্স রিসার্চ ইউনিট তাদের এক গবেষণায় দেখিয়েছে, সর্বনাশা চিকিৎসা খরচ মেটাতে গিয়ে দরিদ্র হয়ে পড়ার হার বার্ষিক প্রায় ১৭ শতাংশ। প্রতি বছর চিকিৎসা খরচের কারণে দারিদ্র্যের হার ৩ শতাংশ হারে বেড়ে যায়। বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারি উভয় খাতে স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা থাকায় একটি সুপরিকল্পিত ক্ষুদ্র স্বাস্থ্যবীমার চাহিদা রয়েছে বলে মন্তব্য করেছে এ রিসার্চ ইউনিট।
প্রকাশিত: ১৬-৬-২০১৪