নিজস্ব প্রতিবেদক: কোম্পানির তহবিল থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে পদ্মা ইসলামী লাইফের কর্মকর্তারা। বছরে পর বছর ধরেই চলছে গ্রাহকের টাকার এমন লুটপাট। ভূয়া বিল ভাউচার দাখিল করে গত ৩ বছরেই কোম্পানির তহবিল থেকে প্রায় ৮ কোটি টাকা তুলে নিয়েছে তারা। গ্রাহকের টাকা লুটপাটের এ অভিযোগ উঠেছে আইডিআরএর বিশেষ নিরীক্ষায়। কোম্পানিকে পাঠানো আইডিআরএ’র এক চিঠি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, নিয়োগ পরীক্ষা, সেমিনার, সম্মেলন ও প্রশিক্ষণ, স্ট্যাম্প ক্রয়, ভ্রমণ ব্যয়সহ নানা খাতে খরচের বিল ও ভাউচার তৈরি করে এসব টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। বিল ও ভাউচারগুলো করা হয়েছে সাদা কাগজের শীটে। একইসঙ্গে এসব বিলের সহায়ক কোনো দলিল বা প্রমাণাদিও পাওয়া যায়নি। বিলগুলোর সহায়ক কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে কর্মকর্তাদের যোগসাজসে।
ভূয়া বিল তৈরি করে টাকা তুলে নেয়ার ঘটনায় যেসব কর্মকর্তার নাম উঠে এসেছে তারা হলেন- কোম্পানির ডিএমডি বদরুজ্জামান বাদল, মিজানুর রহমান ও এমদাদুল হক ভূঁইয়া, এসডিএম খন্দকার শামীম আহসান, আমিনুল ইসলাম ও মো. আবদুল্লাহ মোরশেদ আলম।
চিঠিতে বলা হয়েছে, কোম্পানিটির উর্ধ্বতন ৬ কর্মকর্তার নামে ভাউচার দাখিল করে ৬৭ লাখ ৭৭ হাজার ৫০৩ টাকা তোলা হয়েছে। এ টাকা তোলা হয়েছে কৃত্রিমভাবে ভাউচার তৈরি করে। খরচ দেখানো হয়েছে নিয়োগ পরীক্ষা, সেমিনার, সম্মেলন ও প্রশিক্ষণ খাতে।
এর মধ্যে কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদরুজ্জামান বাদলের নামে ৭ লাখ ৫৭ হাজার ২শ’ টাকা, সিনিয়র সহকারি ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার শামীম আহসানের নামে ২১ লাখ ২৫ হাজার টাকা সহকারি ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমানের নামে ১৫ লাখ ৬৪ হাজার, এমদাদুল হক ভূইয়ার নামে ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৫শ’ টাকা। অপর ২ কর্মকর্তা আবদুল্লাহ মোর্শেদের নামে ১৩ লাখ ও আমিনুল ইসলামের নামে ৭৯ হাজার টাকা তোলা হয়েছে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ভ্রমণের খরচ বাবদ কোম্পানির তহবিল থেকে কর্মকর্তারা তুলে নিয়েছে ১ কোটি ৮৪ লাখ ৯৮ হাজার ৪০৫ টাকা। কৃত্রিমভাবে ভাউচার তৈরি করে এ টাকা তুলে নেয়া হয়েছে। বিল করা হয়েছে সাদা কাগজের শীটে। ভ্রমণ খাতের এ ব্যয়কে প্রিমিয়াম আয়ের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবঙ তা আর্থিক অনিয়ম বলে মন্তব্য করা হয়েছে চিঠিতে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, পুরস্কার ক্রয়ের ব্যয় দেখিয়ে ১ কোটি ২০ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে কর্মকর্তারা। এটি করা হয়েছে উর্ধ্বতন কর্মকর্তার যোগসাজসে। এ টাকা তুলে নিয়ে ব্যয়ের সহায়ক দলিল কাগজপত্র কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে।
চিঠিতে আরো বলা হয়েছে ব্যবসা উন্নয়ন ব্যয় নামক একটি খাতে সাদা কাগজের ভাউচার দিয়ে ২০১২ ও ২০১৪ সালে ৯২ লাখ ৪৯ হাজার ৭১৯ টাকা তুলে নিয়েছে কর্মকর্তারা। অথচ এ টাকা ব্যয় হলেও ব্যবসার কোনো উন্নয়নের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফলে গুরুতর আর্থিক অনিয়ম করতেই ব্যবসা উন্নয়নের নামে কর্মকর্তারা এ টাকা তুলে নিয়েছে বলে মন্তব্য করা হয়েছে চিঠিতে।
সংশ্লিষ্ট কোনো কাগজপত্র বা দলিলাদি ছাড়াই সাদা কাগজে শীট তৈরি করে টিএডিএ বাবদ ৬৪ লাখ ৯৫ হাজার টাকা তুলে নিয়েছে কর্মকর্তারা। পরিচালনা পরিষদের অনুমোদন ছাড়াই মিটিং খাতে ব্যয় বাবদ ৬৭ লাখ ৪২ হাজার ৬০০ টাকা তুলে নিয়েছে কর্মকর্তারা। এছাড়া স্ট্যাম্প ক্রয় না করেই ৮১ লাখ টাকার স্ট্যাম্প ক্রয় দেখিয়ে ৮১ লাখ টাকা তুলে নিয়েছে কর্মকর্তারা। আর কারণ ছাড়াই বিল দাখিল করেছে ২২ লাখ ১৫ হাজার টাকা। এ বিলও তুলে নেয়া হয়েছে একই কায়দায়।
ডিএমডি মিজানুর রহমান ও এমদাদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা বলেন, আমরা আইডিআরএ’র কাছে জবাব দিয়েছি। এর বাইরে তারা কোনো মন্তব্য করতে চাননি। এছাড়া অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক বদরুজ্জামান বাদলের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এসব বিষয় নিয়ে কোম্পানির অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরি মো. ওয়াসিউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে ফোন করবেন বলে জানান। পরে আবারও ফোন করে তাকে পাওয়া যায়নি।