নিজস্ব প্রতিবেদক: বেসরকারি জীবন বীমা কোম্পানি পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা খাতের খরচ কমেছে ৮.৩৬ শতাংশ। বিগত ৫ বছরে অর্থাৎ ২০১১ -২০১৫ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর গড়ে ১.৬৭ শতাংশ খরচ কমিয়েছে কোম্পানিটি। তবে খরচের এই হার এখনো অনুমোদিত সীমার চেয়ে বেশি।
সর্বশেষ হিসাব সমপনী বছর ২০১৫ সালে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা খাতে খরচ ছিল অনুমোদিত সীমার চেয়ে ৩.২০ শতাংশ বেশি। তবে অতিরিক্ত খরচের এই হার আগের বছরের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। আগের বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালে কোম্পানিটির অতিরিক্ত খরচ ছিল অনুমোদিত সীমার চেয়ে ৬ শতাংশ বেশি।
এ বিষয়ে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, খরচের বিষয়ে আইডিআরএ কঠোর নজরদারি শুরু করায় আমরাও খরচ কমাতে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। ইতোমধ্যে অতিরিক্ত খরচ প্রায় নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে এসেছে। আগামী ২/১ বছরের মধ্যেই তা অনুমোদিত সীমার মধ্যে চলে আসবে।
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)’র কাছে কোম্পানিটির দেয়া প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সর্বশেষ হিসাব সমাপনী বছর ২০১৫ সালে কোম্পানিটি মোট প্রিমিয়াম আয় করেছে ৬৭০ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
এর বিপরীতে ব্যবস্থাপনা খাতে খরচ করেছে ২৪৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা। যা মোট প্রিমিয়াম আয়ের ৩৬.৪০ শতাংশ। আগের বছরের তুলনায় তা ১.৭৮ শতাংশ কম। ২০১৪ সালে কোম্পানিটি খরচ করে ২৫২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, যা মোট প্রিমিয়াম সংগ্রহের ৩৮.১৮ শতাংশ। এ বছর প্রিমিয়াম আয় করে ৬৬২ কোটি ৩২ লাখ টাকা।
অন্যদিকে ২০১৫ সালে কোম্পানির অনুমোদিত খরচের সীমা ছিল ২২২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। যা মোট প্রিমিয়াম আয়ের ৩৩.২০ শতাংশ।এ বছরে কোম্পানিটি অতিরিক্ত খরচ করে ২১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। যা মোট প্রিমিয়াম আয়ের ৩.২০ শতাংশ।
আগের বছর অর্থাৎ ২০১৪ সালে খরচের অনুমোদন ছিল ২১৩ কোটি ৮০ হাজার টাকা বা ৩২.১৮ শতাংশ। খরচ করে ২৫২ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। কোম্পানিটি ওই বছর খরচ বেশি করে ৩৯ কোটি ৭৫ হাজার টাকা। যা মোট প্রিমিয়াম আয়ের ৬ শতাংশ। অর্থাৎ ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে অতিরিক্ত খরচ কমে যায় ২.৮০ শতাংশ।
২০১৩ সালে কোম্পানিটি ব্যবস্থাপনা খাতে খরচ করে ২৫২ কোটি টাকা। যা মোট প্রিমিয়াম আয়ের ৩৯.৩৪ শতাংশ। ২০১২ সালে এই খরচ ছিল ২৮০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। অর্থাৎ ৪২.৩৩ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে খরচ কমে ২.৯৯ শতাংশ। কোম্পানিটি ২০১৩ সালে মোট প্রিমিয়াম আয় করে ৬৪০ কোটি ৬১ লাখ টাকা এবং ২০১২ সালে মোট প্রিমিয়াম আয় করে ৬৬১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
অন্যদিকে ২০১৩ সালে ব্যবস্থাপনা খাতে খরচের অনুমোদন ছিল ২১২ কোটি ৬৭ লাখ টাকা, যা মোট প্রিমিয়াম আয়ের ৩৩.২০ শতাংশ। খরচ করে ২৫২ কোটি টাকা, অর্থাৎ ৩৯.৩৪ শতাংশ। এ বছরে কোম্পানিটি অতিরিক্ত খরচ করে ৩৯ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। যা মোট প্রিমিয়াম আয়ের ৬.১৪ শতাংশ।
২০১২ সালে খরচের অনুমোদন ছিল ২১৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। যা মোট প্রিমিয়াম আয়ের ৩২.২৯ শতাংশ। এ বছরে খরচ করে ২৮০ কোটি ১৪ লাখ টাকা, অর্থাৎ ৪২.৩৩ শতাংশ। অতিরিক্ত খরচ ৬৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা, অর্থাৎ ১০.০৪ শতাংশ। ২০১২ সালের অতিরিক্ত খরচের পরিমাণ ২০১৩ সালে এসে কমে যায় ৩.৯০ শতাংশ।
অন্যদিকে ২০১১ সালে খরচের অনুমোদন ছিল ২০৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। যা মোট প্রিমিয়াম আয়ের ৩৩.৯৫ শতাংশ। কোম্পানিটি খরচ করে ২৭০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা, অর্থাৎ প্রিমিয়াম আয়ের ৪৪.৭৬ শতাংশ। এ বছরে কোম্পানিটি মোট প্রিমিয়াম আয় করে ৬০৪ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। বছরটিতে কোম্পানিটি অতিরিক্ত খরচ করে ৬৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১০.৮১ শতাংশ। ২০১১ সালের তুলনায় ২০১২ সালে এসে মোট খরচ কমে যায় ২.৪৩ শতাংশ, আর অতিরিক্ত খরচ কমে দশমিক ৭৭ শতাংশ।
উল্লেখ্য, আইডিআরএ দাখিল করা তথ্য অনুসারে কোম্পানির অনুমোদিত খরচের হিসাব ধরা হয়েছে প্রথম বর্ষ প্রিমিয়াম আয়ের উপর ৯০ শতাংশ, নবায়ন প্রিমিয়াম আয়ের উপর ১৩.৮০ শতাংশ ও গ্রুপ ও হেলথ ইন্স্যুরেন্স খাতে ২০ শতাংশ।
এ বিষয়ে কোম্পানির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা বি.এম ইউসুফ আলী বলেন, ব্যবস্থাপনা খাতে খরচ কমাতে আইডিআরএ যে উদ্যোগ নিয়েছে তা লাইফ বীমা কোম্পানিগুলো উন্নয়নের জন্য একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। আইডিআরএ থেকে কঠোর নজরদারি শুরু করার সঙ্গে সঙ্গেই আমরা খরচ কমানোর উদ্যোগ নেই। খরচ কমাতে আমরা অতিরিক্ত জনবল, অফিস ও গাড়ি ব্যবহার কমিয়েছি। ইতোমধ্যেই আমরা খরচ কমিয়ে আনতে সফলও হয়েছি। আমরা আশা করছি আগমী দু’এক বছরের মধ্যে খরচের পরিমাণ সীমার মধ্যে আনতে সক্ষম হবো।