গ্রুপ বীমার নামে গার্মেন্টস শ্রমিকদের সঙ্গে প্রতারণা

গার্মেন্টস শ্রমিকদের গ্রুপ বীমা সুবিধা দেয়ার নামে বরাবরই প্রতারণা করে আসছে এ খাত সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। আর আইনকে বৃদ্ধাঙ্গলি দেখিয়ে তাতে সহায়তা করে যাচ্ছে বীমা কোম্পানিগুলোও। সম্প্রতি রাজধানীর একটি হোটেলে পোশাক শিল্প মালিক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ  নতুন জীবন বীমা কোম্পানি সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাণিজ্যমন্ত্রী  তোফায়েল আহমদের উপস্থিতিতে ওই চুক্তিপত্রে বিজিএমইএ সভাপতি মো. আতিকুল ইসলাম এবং সোনালী লাইফের চেয়ারম্যান নূর-ই-হাফজা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্বাক্ষর করেন। এ বিষয়ে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অজিত চন্দ্র আইচের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে এ চুক্তিতে গ্রুপ বীমার নীতিমালা না মানার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, বিজিএমইএ অনেকদিন থেকেই এ ধরণের চুক্তি করে আসছে। এর আগে একই ধরণের চুক্তি তারা করেছিল ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সঙ্গে। তবে  গ্রুপ বীমার নীতিমালা অনুসারে বিজিএমইকে চুক্তি করতে বলা হলে তারা তা মানেনি। ফলে আগের ধারাবাহিকতাতেই এ চুক্তি করা হয়েছে। এর আগে ডেল্টা লাইফের সঙ্গে  এমন একটি চুক্তি করেছিল বিজিএমইএ। ওই চুক্তিতেও বীমা আইন অমান্য করে  প্রতি কারখানায় মাত্র ২০ জনকে গ্রুপবীমার  আওতায় আনা হয়। দাবির পরিমাণ ছিল ১ লাখ টাকা।  সোনালী লাইফের সঙ্গে এবারের চুক্তিতে ২০ জন শ্রমিকের পরিবর্ত ২৫ জনের জন্য এ বীমা করা হলো। দাবির পরিমাণ ১ লাখ টাকার স্থলে ২ লাখ টাকা করা হলো। সংশ্লিষ্টদের অভিমত, সরকারের আইনের চাপে  শ্রমিকদের  জন্য এ বীমা চালুর উদ্যোগ নেয়নি বিজিএমইএ।  পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বীমার আওতায় আছে  কি না তা দেখতে চায়  বিদেশী ক্রেতা। এ কারণেই কারখানার শ্রমকিরা বীমা আওতায় আছে এমন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন হয়। মূলত ক্রেতাদের কাছে সার্টিফিকেট দেখাতেই গোষ্ঠী বীমা করে থাকে কারখানার মালিক। তবে বীমার সার্টিফিকেটে শ্রমিকের সংখ্যা উল্লেখ থাকে না বলে ২০ জন শ্রমিকের জন্য চুক্তি করে পুরো একটি ইউনিটের জন্য সার্টিফিকেট নেয়া হয়। শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ৯৯ অনুযায়ী কোন প্রতিষ্ঠানে ২০০ জনের বেশি স্থায়ী শ্রমিক থাকলে বীমা আইন অনুসরণ করে গ্রুপ বীমা চালু করতে হবে। ২০১৩ সালে এ আইনটির সংশোধন এনে ১০০জন শ্রমিক থাকলেই সেই প্রতিষ্ঠানের   গ্রুপ বীমা বাধ্যতামূলক করা হয়।  আইনের অভিপ্রায় কারখানার শতভাগ শ্রমিক গ্রুপবীমার আওতায় আনা । কিন্তু কতজন বা শতকরা কতভাগ শ্রমিককে গ্রুপবীমার আওতায় আনতে হবে তা  সুনির্দিষ্ট করে বলা না থাকায় এ সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে বিজিএমইএ। এ ছাড়া বীমা চুক্তির নীতিমালা অনুসারে গ্রুপবীমার চুক্তিতে আবদ্ধ প্রত্যেক শ্রমিকের ব্যক্তিগত তথ্য চুক্তির ভিত্তি। চুক্তিতে আবদ্ধ সকল শ্রমিকের মৃত্যুদাবি পরিশোধযোগ্য। অর্থাৎ যেসব শ্রমিককে গ্রুপ বীমা সুবিধা দেয়া হবে তাদের ব্যক্তিগত তথ্যকে ভিত্তি ধরেই চুক্তি হয়ে থাকে। ফলে যেসব শ্রমিকের ব্যক্তিগত তথ্য নেই তারা এ বীমার আওতায় পড়ে না। একই ভাবে তারা দাবি পাওয়ার যোগ্য হয় না। এ নীতিমালার কোনো তোয়াক্কঠন করছে না চুক্তিকারি দুই পক্ষই। এর আগে গত বছর ৩১ জানুয়ারি গোষ্ঠী বীমার আওতায় বীমা সুবিধা ১ লাখ টাকা থেকে ২ লাখ টাকা করে সরকারি জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান জীবন বীমা করপোরেশনের  সঙ্গে চুক্তি করে বিকেএমইএ। এই স্বারক চুক্তিতে সই করেন বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান ও জীবন বীমা করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরীক্ষিত দত্ত চৌধুরী। এতে ২০ জন শ্রমিকের জন্য বার্ষিক প্রিমিয়াম নির্ধারণ করা হয় ১৭ হাজার টাকা। এর আগে ২০ জন শ্রমিকের জন্য ৮ হাজার টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে ২০ জন শ্রমিকের প্রতিজনের জন্য ১ লাখ টাকা বীমা সুবিধার চুক্তি করেছিল বিকেএমইএ। এ প্রসঙ্গে সেলিম ওসমান বলেন, সব শ্রমিককে বীমার আওতয়া আনা হয়নি এ কথা সঠিক নয়। এর যুক্তি হিসেবে তিনি বলেন, একটি কারখানায় সব শ্রমিক একবারে মারা যায় না। তাই ২০ জনের জন্য বীমা করা হলেও তাতে সব শ্রমিকই বীমা সুবিধার আওতায় থাকে। তিনি বলেন, সকল শ্রমিকের জন্য বীমা করে প্রিমিয়াম জমা দিয়ে ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিগুলোকে লাভবান করার কোন মানে হয় না। এজন্য অল্প সংখ্যক শ্রমিকের গ্রুপ বীমা করা হয়। উল্লেখ্য, তাজরিন গার্মেন্টেসে আগুনে পুড়ে এবং রানাপ্লাজা ধসে গার্মেন্টস শ্রমিকের মৃত্যুতে শ্রমিকদের বীমা সুবিধার বিষয়টি আলোচনায় ওঠে আসে। এ সময় বীমা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশন ও অন্যান্য বাণিজ্য সংগঠনের পক্ষ থেকে সব শ্রমিককে বীমা আওতায আনার দাবি উত্থাপিত হয়।এ সময়ে কারখানাপ্রতি মাত্র ২০ জন শ্রমিককে বীমা সূবিধা দেয়ার বিষয়টিকে অমানবিক হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। প্রকাশিত: ১১-৬-২০১৪