আবদুর রহমান: বছরে ১,৫০০ টাকা প্রিমিয়াম দিয়ে ৭,৫০,০০০ টাকার বীমা সুবিধা পাবেন প্রবাসী শ্রমিকরা। দেশিয় বীমা কোম্পানির মাধ্যমে এই সুবিধা চালু করা হয়েছে। ‘প্রবাসী’ নামে নতুন এই বীমা পলিসির আওতায় গ্রাহকের যেকোনো আকস্মিক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুজনিত দাবি পূরণ করবে বীমাকারী প্রতিষ্ঠান। কর্মসংস্থানের জন্য বিদেশে যাওয়া বাংলাদেশি শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সামাজিক-আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এই পরিকল্পের উদ্দেশ্যে।
দেশের সব নন-লাইফ বীমা কোম্পানির জন্য এই পলিসি অনুমোদন দিয়েছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) । তবে বীমাগ্রহীতা যে দেশে অবস্থান করবেন সে দেশে নিযুক্ত থার্ড পার্টি অ্যাডমিনিস্ট্রেটরের (টিপিএ) মাধ্যমে বীমা দাবি পূরণের শর্তাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে দেশিয় বীমাকারী প্রতিষ্ঠান। নতুন এই বীমা পলিসি বাধ্যতামূলক করার প্রক্রিয়া চলছে বলেও জানা গেছে।
এদিকে বিদেশে কর্মী পাঠানোর আগে তাদের বীমা নিশ্চিত করতে বিশেষায়িত বীমা কোম্পানি গঠনের সুপারিশ করেছে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গত ১০ মার্চ জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে জি টু জি প্লাস চুক্তির শর্ত অনুযায়ী শ্রমিকরা যাতে দ্রুত মালয়েশিয়ায় যেতে পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণেরও তাগিদ দিয়েছে কমিটি।
এর আগে ২০০৯ সালে সরকার প্রথম এই বীমা অনুমোদনের উদ্যোগ নেয়। কিন্তু প্রক্রিয়াগত ত্রুটিসহ বেশ কিছু কারণে দীর্ঘদিন ধরে এই উদ্যোগ আটকে থাকে। দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর বর্তমান সরকার এ নিয়ে আবারো তোড়জোড় শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে ২০১৫ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নতুন এই পলিসির অনুমোদন দেয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ।
তবে দেশের সব নন-লাইফ বীমা কোম্পানিকে ‘প্রবাসী’ বীমা চালুর অনুমোদন দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত গ্রাহকদের দোরগোড়ায় পৌঁছায়নি এই সুবিধা। অনুমোদনের প্রায় দেড় বছর হয়ে গেলেও বেশিরভাগ বীমা কোম্পানি এই পলিসি চালু করতে পারেনি। এমনকি অনেক বীমা কোম্পানির কর্তাব্যক্তি নতুন এই পলিসি সম্পর্কে কোন ধারণা নেই বলেও জানিয়েছেন। আবার যেসব কোম্পানি এই পলিসি চালু করেছে তারাও এখন পর্যন্ত বাজারে ছাড়তে পারেনি।
তবে বীমা দাবি পূরণের শর্তাদি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে মধ্যপ্রাচ্য ও মালয়েশিয়ার কয়েকটি থার্ড পার্টি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর (টিপিএ) প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন করাসহ একজন বীমা গ্রহীতা যেসব সুযোগ-সুবিধা পাবেন তাও সুনির্দিষ্ট করেছে দেশের বেসরকারি কোম্পানি গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স। প্রতিষ্ঠানটি তাদের ব্রুশিয়ারে স্কেল অব বেনিফিট অর্থাৎ বীমা গ্রহীতার প্রাপ্য সুবিধার বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করেছে।
ব্রুশিয়ারে উল্লেখিত তথ্য মতে, গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি একজন ‘প্রবাসী’ বীমা গ্রাহককে স্থায়ী অক্ষমতার জন্য ৭,৫০,০০০ (সাত লাখ পঞ্চাশ হাজার) টাকা কাভারেজ দেবে। মরদেহ পরিবহনের জন্য পাওয়া যাবে ৫০,০০০ টাকার কাভারেজ। হসপিটালাইজেশন সুবিধা (দুর্ঘটনাজনিত) দেবে দিনপ্রতি ১,০০০ টাকা। তবে এই সুবিধা যেকোন একটি দুর্ঘটনার জন্য সর্বোচ্চ ৩০ দিনের জন্য পাওয়া যাবে।
এছাড়া ছিনতাইয়ের কারণে জরুরি কাগজপত্র পুন:স্থাপন খরচ হিসেবে সর্বোচ্চ ৩,০০০ টাকার কাভারেজ, হুইল চেয়ার/কৃত্তিম অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সরঞ্জাম খরচ সর্বোচ্চ ৫,০০০ টাকার কাভারেজ এবং এম্বুলেন্স ফি বাবদ দেয়া হবে সর্বোচ্চ ২,০০০ টাকার কাভারেজ। এসব সুবিধা পাওয়ার জন্য বীমা গ্রাহককে বাৎসরিক প্রিমিয়াম দিতে হবে ১,৫০০ টাকা। তবে এর সঙ্গে ১৫ শতাংশ ভ্যাট হিসেবে আরো ২২৫ টাকা দিতে হবে। অর্থাৎ বছরে ১৭২৫ টাকা প্রিমিয়াম দিতে হবে।
গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের ডেপুটি সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট শুভাশিষ বড়ুয়া বলেন, বাংলাদেশি অভিবাসীদের জন্য আকর্ষণীয় বীমা স্কিম ‘প্রবাসী’। এটি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কাভারেজসহ আরো বাড়তি কিছু সুবিধা প্রদান করবে। বিশেষ সুবিধাগুলো হলো- যেকোন দুর্ঘটনায় মৃত্যু, দুর্ঘটনায় আংশিক অথবা স্থায়ী অক্ষমতা, অন্যান্য সুবিধা হলো- বিদেশে কর্মরত অবস্থায় দুর্ঘটনার শিকার, বীমাকারির পরিবারকে খুঁজে বের করা, বীমা সংক্রান্ত যাবতীয় দলিলাদি গ্রাহকের পরিবার থেকে সংগ্রহের মাধ্যমে বীমা দাবি মেটানোর সহায়তা ইত্যাদি।
কোম্পানিটির মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ফারজানা চৌধুরী বলেন, ‘প্রবাসী’ বীমা বাজারে ছাড়ার জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। অল্প কিছু দিনের মধ্যে মালয়েশিয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হবে। এরপর সিঙ্গাপুরসহ অন্যান্য দেশে এই পলিসি বিক্রি করা হবে। এরইমধ্যে থার্ড পার্টি অ্যাডমিনিস্ট্রেটর (টিপিএ) প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। মালয়েশিয়ায় হাসপাতালগুলোর সঙ্গে কথা হচ্ছে উদ্বোধনের পর তাদের সঙ্গে চুক্তি করা হবে। বাংলাদেশি শ্রমিকদের এই বীমায় বিদেশিরাও খুশি। তারা বেশ আগ্রহ দেখিয়েছে। মালয়েশিয়ায় এই বীমা চালু করতে কোন অনুমতি লাগবে না বলেও জানান গ্রীন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্সের সিইও ফারজানা চৌধুরী।
সেন্ট্রাল ইন্স্যুরেন্সের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. জাহিদ আনোয়ার খান বলেন, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য আইডিআরএ ‘প্রবাসী’ নামে একটি বীমা পলিসি অনুমোদন দিয়েছে। বিষয়টি নতুন হওয়ায় এ সম্পর্কে ভালো ধারণা নেই। তবে কঠোর পরিশ্রম করে যারা দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরাচ্ছে তাদের নিজেদের ও পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তার জন্য এই বীমা পলিসি খুবই উপযোগী। কারণ, বীমা হচ্ছে দু:সময়ের সাথী। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমাদের দেশে কেউ স্বেচ্ছায় কোন বীমা কেনে না। তাই সবার জন্য এই বীমা বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন বলেও জানান জাহিদ আনোয়ার।