প্রকৃত মালিকদের অজ্ঞাতসারে এক সহমালিকের ওয়ারিশের নামে ভূয়া আম-মোক্তার নামা দলিলের মাধ্যমে সৃষ্ট মালিকের কাছ থেকে জমি কিনেছে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। ১৪ কোটি টাকা দাম দিয়ে জমি কিনলেও ৩০ কোটি টাকায় ওই জমি কেনার অনুমোতি পেয়েছে কোম্পানিটি। এতে গ্রাহকের ১৬ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে কোম্পানিটি।
জানা যায়, রাজধানীর তেজগাঁওর ফার্মগেট এলাকায় ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রধান কার্যালয়ের সামনের ৫৫ নং কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউয়ের ৪ কাঠা জমিটির মালিক এমাম উদ্দিন মারা গেলে পৈত্রিক সুত্রে মালিক দখলকার হয় তার ছেলে জসিম উদ্দিন, আফাজ উদ্দিন, ছেলে আফতাব উদ্দিনের ওয়ারিশগণ এবং মেয়ে জয়নব বেগম, আনোয়ারা ও মেয়ে আয়েশা বেগমের পুত্র জিন্নত আলী। মালিক পক্ষ জমিটিতে ৫ তলা ভবন নির্মাণ করে বসবাস করে আসছে। এই জমিটি কেনার জন্য দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা চালিয়ে আসছিল ন্যাশনাল লাইফ। কিন্তু মালিকপক্ষ এ জমিটিতে মার্কেট থাকায় বিক্রি করতে রাজি হচ্ছিল না। ইতোমধ্যে মালিকপক্ষের এক শরিকের এক ওয়ারিশ একটি ভূয়া আমমোক্তার নামা বানিয়ে জমিটি ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের কাছে বিক্রি করার প্রক্রিয়া শুরু করে। জমিটির মোট মূল্য ধার্য হয় ১৪ কোটি টাকা। এরপর জমিটি কিনতে কোম্পানিটি ৩০ কোটি টাকা মূল্য ধরে আইডিআরের কাছে অনুমোদনের জন্য আবেদন করে।অভিযোগ ওঠেছে, মোটা অংকের এ টাকা হাতিয়ে নিতে জমির প্রকৃত মালিকদের বঞ্চিত করে ভূয়া মালিকও বানানো হয়েছে ন্যাশনাল লাইফের এ চক্রের সহযোগিতায়। এ তথ্য জানতে পেরে জমির প্রকৃত মালিক দুজন জসিম উদ্দিন ও আফাজ উদ্দিন ৩১ মার্চ ২০১৪ তারিখে ঢাকার এডিএম আদালতে ১৪৫ ধারায় প্রতিকার চেয়ে মামলা দায়ের করে।মামলা নম্বর ২৪৭/ ২০১৪। বিজ্ঞ এডিএম আদালত আবেদনকারীদের পক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নিতে তেজগাঁও থানার ওসিকে নির্দেশ দেন। তেজগাঁও থানার ওসিকে আগামী ২০ জুলাইয়ের মধ্যে এ ব্যাপারে প্রতিবেদন দিতে বলেছে আদালত। এর পাশাপাশি মালিক দুজন দেওয়ানী মামলা করারও প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে।
এ দিকে গত ৬ মে ওই জমি ৩০ কোটি টাকায় কিনতে অনুমোদন দেয় আইডিআরএ। অনুমোদন পাওয়ার দুই দিনের মাথায় জমিটি রেজিষ্ট্রি করে নেয় কোম্পানিটি। বীমা আইন অনুসারে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো খাতে লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির বিনিয়োগ করার বিধান নেই। কিন্তু আইডিআরএর পক্ষ থেকে এ ধরণের ভূয়া দলিলের জমি কেনার অনুমোদন দেয়ায় বীমা গ্রাহকের টাকা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। যা গ্রাহকের স্বার্থ বিরোধী বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে ভূয়া দলিলের মাধ্যমে জমি ক্রয়ের অনুমোদন দেয়া প্রসঙ্গে আইডিআরএর লাইফ খাতের সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা আইন বিশেষজ্ঞের মতামত নিয়েই জমি ক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছি।
আইডিআরএর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রভাবশালী মহলের চাপের মুখেই এ জমি কেনার অনুমোদন দিয়েছে আইডিআরএ। ন্যাশনাল লাইফের বর্তমান চেয়ারম্যান সরকার দলীয় এমপি মোর্শেদ আলমের চাপের মূখেই এ জমিটি কেনার অনুমোদন দেন আইডিআর চেয়ারম্যান।
সূত্র আরো জানায়, সরকার দলীয় এমপির ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সে গড়ে ওঠেছে একটি চক্র। এ চক্রটি জমি ক্রয় ও বিক্রয়ের মাধ্যমে হাতিয়ে নিচ্ছে গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা। কারওয়ান বাজারের জমি ক্রয় ছাড়াও কোম্পানির ২১০ তম বোর্ড সভায় পান্থপথে অবস্থিত প্রায় তিন বিঘা জমি বিক্রয়ের সিদ্ধান্ত নেয় কোম্পানির পরিচালনা পর্যদ। একই সঙ্গে এ জমি বিক্রয় করে ৭৯ মতিঝিলের একটি জমি ক্রয় ও তাতে ২০ তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মূলত অতিরিক্ত দাম দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের উদ্যেশেই এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ ওঠেছেঁ।
সূত্র মতে, কিছুদিন আগে ৩ কোটি টাকা মূল্য দেখিয়ে একটি জমি ক্রয়ের অনুমোতি চেয়ে আবেদন করে ন্যাশনাল লাইফ। নিয়ম মাফিক এ ধরণের আবেদন আইডিআরএ’র ডেসপাসের রেজিষ্টার হয়ে আসার কথা। কিন্তু তারা এ আবেদন সরাসরি আইডিআরএ’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের হাতে দিয়ে যায়। আর তা নিয়ে আসেন ন্যাশনাল লাইফ ইন্স্যুরেন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জামাল এ নাসের। পরে ওই দিনই জমির কেনার এ অনুমোদন পেতে সারাদিনই বসে থাকেন আইডিআরএর দফতরে। অথচ আইডিআরএর একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি সম্পর্কে বলেন, লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির জমি কেনার বিষয়টি খুবই গুরত্বপূর্ণ। এখানে গ্রাহকের টাকা দিয়েই জমি কেনা হয়। ফলে এ ধরণের বিনিয়োগ কতটা লাভজনক তা খুবই গুরত্বপূর্ণ। ফলে এমন একটি বিষয়ে আবেদন করে তা হাতে হাতে পাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।
প্রকাশিত ১০-৬-২০১৪