১২ রুপিতে ২ লাখ রুপির বীমা সুবিধা

আবদুর রহমান: মাত্র ১২ রুপি ব্যাংক একাউন্টে থাকলেই ভারতীয় নাগরিকরা পাবেন ২ লাখ রুপির বীমা সুবিধা। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তা দিতে প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা বা পিএমএসবিওয়াই নামে এই সেবা চালু করেছে ভারত সরকার। গত বছর মে মাসে সেবাটি চালুর এক সপ্তাহের মধ্যে ৭ কোটি ২২ লাখ ভারতীয় নাগরিক এর আওতায় আসে। জুন মাস নাগাদ এই সংখ্যা সাড়ে ৮ কোটি ছাড়িয়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ভারতীয় জনসংখ্যার একটি বড় অংশ গ্রামাঞ্চলে বসবাস করে এবং তাদের বেশিরভাগই কোন ধরণের সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের আওতায় পড়ে না। এমনকি এই জনসংখ্যার একটি বড় অংশ ব্যাংকিং সুবিধাগুলো উপভোগ করে না। এছাড়াও গ্রামীণ এই জনগোষ্ঠির বেশির ভাগই সময়ের সাথে সাথে চালু হওয়া বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পগুলি সম্পর্কে অজ্ঞাত।

পিছিয়ে থাকা এসব মানুষের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালের ৯ মে কোলকাতায় পিএমএসবিওয়াই প্রকল্প চালু করেন। পাশাপাশি আরো দুটি বীমা ও পেনশন সংক্রান্ত প্রকল্প চালু করেন। প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারের আন্তরিকতা মন্ত্রীপরিষদকে বিভিন্ন রাজ্যের রাজধানী ও প্রধান শহরগুলিতে একযোগে প্রকল্পগুলো প্রবর্তন ও সফল বাস্তবায়নকে সুনিশ্চিত করার তাগিদে তৎপর করে রাখে।

একটি সেভিংস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং আধার কার্ড (ইউনিক আইডেন্টিফিকেশান অথরিটি অফ ইন্ডিয়া কর্তৃক প্রদেয় বারো এককের একটি ব্যক্তিগত পরিসনাক্তকরণ সংখ্যাযুক্ত কার্ড) সহ ১৮ থেকে ৭০ বছর বয়সীদের যেকেউ এই প্রকল্পে যোগ দিতে পারেন। এজন্য তাকে মনোনীত ব্যক্তির (নমিনি) নাম উল্লেখ করে এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টে আধার কার্ড যুক্ত করে একটি সাধারণ ফর্ম পূরণ করতে হবে। আর প্রকল্পটিকে অব্যাহত রাখার জন্য ওই ব্যক্তিকে প্রতি বছর ১ জুনের মধ্যে এই ফর্মটি জমা দিতে হবে।

এভাবে অ্যাকাউন্টটি খুব সহজেই সক্রিয় হয়ে যাবে এবং সম্পূর্ণ প্রিমিয়ামটি নির্দিষ্ট ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে যাবে। অর্থাৎ কোন ব্যক্তিকে একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। তারপর তার অ্যাকাউন্টে অন্তত ১২ রুপির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রতি বছর ১ জুনের আগে এই প্রকল্পের স্বয়ংক্রিয় পুনর্নবীকরণ নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ দ্বারা প্রতি বছর এই প্রকল্পের স্বয়ংক্রিয় পুনর্নবীকরণের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি এই প্রকল্পের একটি দীর্ঘমেয়াদী বিকল্পের জন্য অন্তর্ভুক্তি পেতে পারেন।

প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বীমা যোজনা বা পিএমএসবিওয়াই’র আওতায় দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যুতে বীমা বাবদ দেয়া হবে ২ লাখ রুপি করে। আর যদি শারীরিকভাবে পূর্ণ অক্ষমতা সৃষ্টি হয় তাহলে দেয়া হবে ১ লাখ রুপি করে। এ জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে ‘অটো-ডেবিট’ পদ্ধতিতে সংগ্রহ করা হবে প্রিমিয়ামের অর্থ। পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য এপিওয়াই’র ক্রেতাদের জমা দেয়া অর্থের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে সরকারকে এই বাবদ ২ হাজার ৫২০ কোটি রুপি থেকে ১০ হাজার কোটি রুপি পর্যন্ত খরচ করতে হবে।

এছাড়াও পরবর্তী পাঁচ বছরের জন্য সরকারকে এপিওয়াই’র আওতায় নতুন ক্রেতার নাম নথিভুক্তকরণ এবং জমা দেয়া অর্থ সংগ্রহের কর্মকাণ্ড সম্পাদন করতে ২শ’ কোটি রুপি খরচ করতে হবে। পাশাপাশি উল্লেখিত সময়ের জন্য পিএমজেজেবিওয়াই এবং পিএমএসবিওয়াই সম্পর্কে প্রচার ও সচেতনতামূলক কাজকর্মের জন্য ২৫০ কোটি রুপির সংস্থান রাখা হয়েছে। সরকার আশা করছে যে চলতি অর্থবছরে এপিওয়াই’র আওতায় প্রায় ২ কোটি নতুন ক্রেতা নাম নথিভুক্ত করাবে।

ভারতের সমস্ত সরকারি স্পনসর্ড সাধারণ বীমা কোম্পানি এই প্রকল্প প্রদান করবে এবং অন্যান্য বীমা কোম্পানি ব্যাংকগুলির সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়ে এই কর্মসূচি বন্টনে যোগদান করতে পারে। আর গ্রাহকদের দেয়া সম্পূর্ণ প্রিমিয়াম ধারা ৮০-সি অনুযায়ী করমুক্ত হবে। পাশাপাশি প্রত্যেক ব্যক্তি এক লাখ রুপি পাবেন, যা ধারা ১০ (১০-ডি) অনুযায়ী করমুক্ত হবে। কোন ব্যক্তি যদি ফর্ম ১৫-এইচ বা ১৫-জি বীমা সংস্থাকে জমা না দেয়, তাহলে এক লাখ রুপির অধিক রুপিতে ২% হারে একটি টিডিএস (ট্যাক্স ডিডাকটেড অ্যাট সোর্স) প্রয়োগ করা হবে।

উল্লেখ্য, ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের হিসাব মতো, ২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত সারাদেশে বাণিজ্যিক ও গ্রামীণ ব্যাংকগুলোর অধীনে জনগণের সেভিংস ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে ২৪৩ মিলিয়ন। এরমধ্যে ১২৬ মিলিয়ন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ব্যাংকগুলোর শাখা কার্যালয়ের মাধ্যমে ও বাকী সংখ্যক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে ‘ব্যাংক মিত্র’দের মাধ্যমে। এই ২৪৩ মিলিয়নের সাথে ১১৬ মিলিয়ন যোগ করলে দাঁড়ায় সারাদেশের সমস্ত পরিবারের সংখ্যা। তবে এই ১১৬ মিলিয়ন অ্যাকাউন্টের মধ্যে ৮৩ মিলিয়ন অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে জিরো ব্যালেন্সে।